ঢাকা সিটি নির্বাচন- ২০২০

ইসি’র সামনে ইভিএম চ্যালেঞ্জ

শাকিল আহমেদ

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মেশিনে ভোট গ্রহণের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে অনেক নির্বাচনে  ইভিএমে ভোট গ্রহণ হলেও অর্ধ কোটিরও বেশি ভোটারের ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা এর আগে হয়নি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ছয়টি আসনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোট হয়। এ আসনগুলোতে ২১ লাখ ভোটার ছিলেন। ওই নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার প্রত্যাশিত ছিল না। ঢাকার দুই সিটিতে ভোটারই আছেন ৫৪ লাখের বেশি। এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ভোটের হারও প্রত্যাশিত হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তাই এই নির্বাচন পুরো ইভিএমে সম্পন্ন করাকে ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। ইতোমধ্যে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে নির্ধারিত কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এখন আমাদের টেকনিক্যাল ভোটিংয়ে আশা উচিত। ৫শ ভোটারের জন্য একটি বুথে ভোট গ্রহণ কোন বিষয় না, বিষয় হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট। ইভিএমেও যদি বুথ দখল হয় তাহলে ইভিএম দিয়েতো কাজ হবেনা, ইভিএমতো বুথ দখল রোধের গ্যারান্টি দেয় না, ইভিএম আইডেন্টিফিকেশন ও ভোট দেয়ার গ্যারান্টি দিতে পারে। বুথ দখলের গ্যারান্টি একমাত্র নির্বাচন কমিশন দিতে পারে।

ইভিএমে ভোট গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না এমনটা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা দুই সিটিতে ইভিএমে নির্বাচন চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই, তবে এটা আমাদের পুরো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পার্লামেন্ট ইলেকশনে আমরা ৬টি বিক্ষিপ্ত আসনে একই দিনে ইভিএম দিয়ে ভোট করেছি। তখন কিন্তু আমরা সেই নির্বাচন উঠিয়ে এনেছি। তাহলে এখন এই ১৫টি আসনে কেন পারবো না?  তখন এই ছয়টি ছাড়াও সারা  দেশে ২৯৪ টি আসনে ব্যালট দিয়ে ভোট নিতে হয়েছে। তখন নির্বাচনে আমাদের অনেক জায়গায় ফোকাস দিতে হয়েছে আর এবার আমাদের পুরো ফোকাসটাই এখানে থাকবে। সিটি নির্বাচনে আমাদের পুরো সামর্থ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন আশাবাদী হলেও প্রার্থীদের অনেকে ইভিএম নিয়ে সন্দিহান। প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ইভিএমে মানুষ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। যদিও সরকারি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইভিএম নিয়ে কোনো আপত্তি তুলছেন না।

নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে ২৮ হাজার ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো.কামাল উদ্দিন। শনিবার  নির্বাচন ভবন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে এসব ইভিএম পাঠানো শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভোটের জন্য ব্যবহার ছাড়াও ভোটের দিন এসব ইভিএম ব্যবহার করা হবে। পরীক্ষামূলক ভোট ও ব্যবহার বিধি জানানোর জন্য গতকাল উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ইভিএম পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মিরপুর-১৪ এ অবস্থিত ঢাকা ডেন্টাল কলেজে এসব যন্ত্র পাঠানো হবে। ৩রা জানুয়ারি মিরপুর-২ এ ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে, ৬ই জানুয়ারি  বনানী বিদ্যানিকেতন এবং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর বনশ্রী শাখায় পাঠানো হবে ইভিএম। ১২ই জানুয়ারি তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে পাঠানো হবে ইভিএম। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, পরীক্ষামুলক ব্যবহারের জন্য উত্তরের ৮টি ও দক্ষিণের জন্য ১১ টি ভ্যেনুতে ইভিএম রাখা হবে। ভোট গ্রহণের আগে থেকে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে আমরা ভোটারদের দেখাবো কিভাবে ভোট দিতে হয়। ইভিএমে দূর্নীতির কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।  
ইসি সূত্রে জানা যায়,  ঢাকার দুই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৩ হাজার ১০৯ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ টি ও ভোটকক্ষ ১৩ হাজার ৫১৪ টি। নতুন ইউনিয়নসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশ (ডিএনসিসি) এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ও দক্ষিণ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। ২৮ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ হাজার ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩ হাজার ইভিএম দিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে এসব মেশিন পর্যায়ক্রমে দুই সিটি করপোরেশনের রির্টানিং কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিবে ইসি। এই ইভিএম মেশিন প্রতিটি কেন্দ্রে পৌছে দেয়ার জন্য দক্ষিণে ১১ ও উত্তরে ৮ টি বিতরন কেন্দ্র নির্ধারণ করেছেন দুই সিটির রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়। ভোটের আগে এখান থেকে ইভিএমগুলো  প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রেই দুই থেকে চারটি ইভিএম অতিরিক্ত রাখা হবে। যদি কোনটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় তাহলে বিকল্প হিসাবে সেগুলো ব্যবহার করা হবে।  প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে অভিজ্ঞ সেনা সদস্য রাখা হবে, ইভিএমে যদি কোন টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তারা সেগুলো অপারেটিংয়ে সাহায্য করবে। এছাড়া ইভিএম অপারেটিংয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের ১ হাজার ১৫০ জন অভিজ্ঞ জনবল কাজ করবে। ঢাকা উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এখানে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৫১৬ টি। এছাড়া দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১২০ টি, ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৯৯৮ টি। এ বছর দুই সিটি নির্বাচনে নতুন যুক্ত হয়েছে ৩৬ টি ওয়ার্ড।

এই ইভিএম ও জনবল দিয়ে সিটি নির্র্র্বাচনে সঠিকভাবে ভোট গ্রহণ সম্ভব কিনা জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো.কামাল উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, প্রতিটি ইভিএমে চার’শ ভোটার ভোট দিতে পারবে একটি কেন্দ্রে চার হাজার ভোটার থাকলে সেখানে ১০টি মেশিনের মাধ্যমে  ভোটাররা খুব সহজেই ভোট দিতে পারবে। এছাড়া  বিকল্প হিসাবে আমরা প্রতিটি কেন্দ্রেই অতিরিক্ত মেশিন রাখবো আমাদের অভিজ্ঞ টেকনেশিয়ানরা এখানে কাজ করবে। আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন আমরা মেশিনগুলোর কোয়ালিটি চেক করে এগুলো (ইভিএম)  দুই সিটির রির্টানিং কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি।  তিনি আরো  বলেন, এক সাথে দুই সিটি নির্বাচনের জন্য  এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর আগেও আমরা জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার করেছি সেখানে আমরা ভালো ফলাফল পেয়েছি।গত ২২শে ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২রা জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ই জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ই জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০শে জানুয়ারি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status