শেষের পাতা

আসামে কারফিউ শিথিল, নাগাল্যান্ডে ধর্মঘট

দ্বিতীয় দিনেও পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা

কলকাতা প্রতিনিধি

১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

গণতান্ত্রিক উপায়ে নাগরিকত্ব বিল ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবেদন জানানো হলেও পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শনিবারও শুক্রবারের মতোই সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে রেল ও সড়ক অবরোধ। বাস-গাড়ি ভাঙচুর ও বাসে আগুন দেয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা থানাতেও ইট ছুঁড়েছে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশকে কোথাও লাঠিচার্জ, কোথাও কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। হাওড়ার ডোমজুড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালানো হয়েছে। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকটি সরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে। পাথরের আঘাতে জখম হয়েছেন হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সাউথ)।

পরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পাল্টা লাঠিচার্জ করতে হয়েছে পুলিশকে। শিয়ালদহ ডিভিশনের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে থেকে। হাসনাবাদ শাখার সোঁদালিয়া-লেবুতলা স্টেশনের মাঝে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। মালদহ ডিভিশনের আজিমগঞ্জ শাখাতেও বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদেও সর্বত্র হিংসাত্মক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ইমামকে শান্তির আবেদন জানাতে হয়েছে। তাতেও স্টেশনে ও ট্রেনে বা রেললাইনে আগুন লাগানো থামেনি। বাসুদেবপুরে হল্ট স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সাঁকরাইল স্টেশনেও বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। অবরোধের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটি ও হাসনাবাদ শাখায় ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধের জেরে আমডাঙায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবারের মতোই অবরোধ চলছে মুর্শিদাবাদেও। রঘুনাথগঞ্জের একাধিক জায়গায় কয়েকঘণ্টা ধরে পথ অবরোধ চলছে। সেখানে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশ পুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। বাস ভাঙচুর করা হয়েছে মুর্শিবাদের সুতিতে। এছাড়াও সাগরদিঘীর পোড়াডাঙা, নিমতিতাতে রেল অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। মুখ্যমন্ত্রী গত শুক্রবার শান্তির আবেদন জানানোর পর এদিন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার চেষ্টা হলে কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে। তবে রাজ্যজুড়ে এই ক্যাব বিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিতেই রাজ্যে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আবার মমতা সকলকে প্ররোচনায় পা দেয়ার আবেদন জানিয়ে বিজেপি’র ভেদাভেদ
নীতির বিরুদ্ধেই আঙ্গুল তুলেছেন।

আসামে কারফিউ শিথিল, নাগাল্যান্ডে ধর্মঘট
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে আসামে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪-এ। সোমবার থেকে চলা বিক্ষোভে এসব মানুষ নিহত হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার গুয়াহাটিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এবং ধিব্রুগড়ে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। ওদিকে নাগাল্যান্ডে ধর্মঘট করছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার নাগা স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এনএসএফ) আধা বেলার ধর্মঘট আহ্বান করে। স্কুল, কলেজ ও বাজারঘাট এতে বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল করেনি বললেই চলে। দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও কেরালায়ও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় ধর্মঘট শুরু হলেও নাগাল্যান্ডে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ধর্মঘটের কারণে সব রকম কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। রাজ্যের রাজধানী কোহিমা একদম ফাঁকা। বেশির ভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে ধর্মঘটের সময়। এনএসএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট দিয়েভি ইয়ানো সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মূল অধিবাসীদের অনুভূতির বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার যে অবিচার করেছে তাতে পুরোপুরি ক্ষুব্ধ এনএসএফ। তিনি বলেন, আমরা কখনোই এই নাগরিকত্ব সংশোধনীতে সমর্থন দেবো না। এটা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষদের বিভক্ত করছে। তিনি বলেন, সব অবৈধ অভিবাসীকে সমানভাবে দেখে এনএসএফ। তাই ধর্মের ভিত্তিতে অবৈধ অভিবাসীদের শ্রেণিকরণে বিশ্বাস করে না এনএসএফ।

নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের পক্ষে নাগাল্যান্ড থেকে ভোট দিয়েছেন নাগা এমপি তোখেহো ইফেথোমি (লোকসভার সদস্য), কেজি কেনিয়া (রাজ্যসভার সদস্য) এবং মণিপুর থেকে লোরহো এস পফোজে (লোকসভা)। এ জন্য তাদের নিন্দা জানায় এনএসএফ। ছাত্রছাত্রীদের এই সংগঠন আরো বলেছে, তারা নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের (এনইএসও) অংশ। তাই সংশোধিত আইন যাতে ওই অঞ্চলে কার্যকর না হয় তা নিশ্চিত করতে সব রকম কর্মসূচি পালন করবে তারা।

অনলাইন জি নিউজ লিখেছে, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত বিক্ষোভে নিহতরা হলেন তিনসুকিয়া, ধিব্রুগড় ও গুয়াহাটির। এমন অবস্থায় ২২শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। ওদিকে গুয়াহাটি ও ধিব্রুগড়ে কারফিউ শিথিল করা হলেও ১০টি জেলা লক্ষ্মীপুর, তিনসুকিয়া, ধেমাজি, ধিব্রুগড়, চারাইডেও, শিবসাগর, জোরহাট, গোলাগহাট, কামরূপ (মেট্রো) এবং কামরূপে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে রাজ্যে রেল চলাচল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য ভারতীয় রেলওয়ে অনেক ট্রেন বাতিল, আংশিক বাতিল, গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া এবং নতুন করে শিডিউল দিয়েছে।

তবে গুয়াহাটি থেকে শুক্রবার কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এদিন সেখানে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের আহ্বানে ১০ ঘণ্টার অনশনে যোগ দেন সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিত্বরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status