দেশ বিদেশ

বিজয়ের শেষ ৩ দিন পাগলা কুকুরের মতো ছিল হানাদাররা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

 চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের শেষ ৩ দিন পাক হানাদার বাহিনীর আচরণ ছিলো পাগলা কুকুরের মতো। রসদ ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সময় তারা ঘরে ঘরে দোকানে দোকানে লুটপাট চালায়। ‘বিজয়ের শেষ ৩ দিন কেমন ছিল চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় একাত্তরের স্মৃতিচারণে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।  শনিবার (১৪ই ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এই গোলটেবিল আলোচনা চলে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) চট্টগ্রাম অফিস এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।  আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অংশ নেন ডা. মাহফুজুর রহমান, এবিএম খালেকুজ্জামান দাদুল, মোহাম্মদ হারিছ, আবু সাঈদ সরকার, ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু (সিইনসি), রেজাউল করিম চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও মোজাফফর আহমদ প্রমুখ।
আলোচনায় মোহাম্মদ হারিছ বলেন, ৩ থেকে ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ সময় নগরীর হালিশহর, ওয়্যারলেস ও বিহারি কলোনিতে পাকিস্তানিরা যাকে ধরে নিয়ে গেছে সে আর ফিরে আসেনি। রেল দাঁড় করিয়ে বাঙালি যাত্রীদের নামিয়ে জবাই করতো তারা। আবু সাঈদ সর্দার বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলেও চট্টগ্রাম শত্রুমুক্ত হয় ১৭ই ডিসেম্বর। ১৪-১৭ই ডিসেম্বর তিনি ছিলেন আগ্রাবাদ এলাকায় মৌলভী সৈয়দের বেস ক্যামেপ। সেখানে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাসে দুজন বিহারিকে পাই। তাদের দেয়া তথ্যমতে নগরীর একটি হোটেল থেকে চার মেয়েকে উদ্ধার করি। কিছু অস্ত্রও পাই। এবিএম খালেকুজ্জামান দাদুল বলেন, পুরো নয় মাস চট্টগ্রামজুড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সার্কিট হাউস, পুলিশ লাইনসসহ কয়েকটি টর্চার সেল ছিল। ১৬ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গিয়ে একটা ডক্যুমেন্ট পাই। সেখানে চট্টগ্রামের কারা আওয়ামী লীগ করেন এবং কাদের মারতে হবে তার লিস্ট উদ্ধার করি। পাকিস্তানের পতাকাটা নামিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শামীমসহ সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেই।
ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু বলেন, রাউজানের সিইনসি সেপশাল হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম, যুদ্ধকালীন ৭ই অক্টোবর আমরা মদুনাঘাট আক্রমণ করি। সেই সম্মুখ যুদ্ধে ৮ জন পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধাও মারা যায়। সেই স্মৃতি এখনো আমাকে কাঁদায়।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ তিন দিন মিরসরাইয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ক্যামেপ অবস্থান করি। এসময় শুনছিলাম প্রচুর মিলিটারি শহর অভিমুখে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও ভয় দুটোই ছিল। রাতে কিছু বাড়ি লুট হয়। রাজাকার আতাউস সোবহানের জল্লাদখানায় দেখেছি চারদিকে মানুষের মাথার খুলি ও রক্তের দাগ।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম শহরে ১৪ই ডিসেম্বর থেকে আতঙ্ক ছিল। আবার ভেতরে ভেতরে উল্লাসও ছিল। বোমারু বিমানে করে যৌথবাহিনী বোমা বর্ষণ করছিল। এসব বিমান দেখে ছোট ছোট বাচ্চারাও ঘরের ছাদে উঠে হাততালি দিত। জনগণের সাহস বেড়েছিল। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল বিজয় সন্নিকটে। ১৫ই ডিসেম্বর শুনতে পাই কুমিরা যুদ্ধে পাক বাহিনী পিছু হটেছে। কুমিরা ফৌজদারহাটে প্রাণপণ যুদ্ধ হয়। তাদের আশঙ্কা ছিল পাক বাহিনী শহরে ঢুকে পড়লে পরাজিত করা কঠিন হবে।
তিনি বলেন, চান্দগাঁওয়ের ইউনুস রাজাকার রাইফেল নিয়ে ঘুরতো আর বলতো হট যাও হট যাও। একদিন একজন মুক্তিযোদ্ধা মিস ফায়ার দিলে ইউনুস রাজাকার রাইফেল ফেলে দৌড় দেয়।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে ফৌজদারহাট, পতেঙ্গা, আমিন জুট মিল এলাকায় একযোগে শতাধিক অপারেশন হয়েছিল। ৩রা ডিসেম্বর বন্দরের অয়েল ডিপোতে বিমান আক্রমণ হয়। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিলই না। আফসোস করতাম, হাতে যদি একটি রাইফেল থাকতো গুলি করে বিমান ফেলে দিতাম। তখন আগ্রাবাদের একটি নালায় ঢুকে নাক উঁচু করে অবস্থান নেয়। নাকের পাশ দিয়ে তখন মলমূত্রসহ আবর্জনা যাচ্ছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status