শেষের পাতা

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ভারতীয় লোকসভা ও রাজ্যসভায় গৃহীত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এ বিল আইনে পরিণত হলে একদিকে অধিকতর নিরাপত্তার আশায় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে উৎসাহিত করতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদের অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত হতে পারে। অন্যদিকে ১৯৭৫-র বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেকে সংখ্যালঘুদের জীবন, পরিবার ও সম্পদের উপর আক্রমণ চালিয়ে যারা তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে, এ বিল আইনে পরিণত হলে তা’ তাদের সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি দখল, ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি অব্যাহত রেখে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করার জন্যে এবং বাংলাদেশকে এক ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে তাদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা বাস্তবায়নের জন্যে অধিকতর উৎসাহিত করবে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ কথা অস্বীকারের উপায়  নেই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিলোপ করে পরবর্তীতে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে সংযোজনের মধ্য দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালী জাতিসত্বাকে বিভাজিত করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়করণ করে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ কম বেশি অব্যাহত আছে। নানান ক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্য এখনো বহুলাংশে বিদ্যমান। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নও অব্যাহত আছে। বহুত্ববাদী সমাজ থেকে বাংলাদেশ ক্রমশঃ দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এসব সমস্যার মৌল সমাধান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে নিহিত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

গণবিরোধী শক্র বা অর্পিত সম্পত্তি আইনের অব্যাহত প্রয়োগ-অপপ্রয়োগে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে, আতংকিত হয়ে ৭৫-পরবর্তীতে পাকিস্তানি আমলের মতো সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করায় তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে যে বাধ্য হয়েছে তা’ বাংলাদেশ আদমশুমারি রিপোর্ট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণীত। যেখানে দেখা যায়, ৪৭-এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর পর পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে সমগ্র জনগোষ্ঠীর ২৯.৭% ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, সেক্ষেত্রে নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির পর ১৯৫১-তে তা নেমে আসে ২৩.১%। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ এ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সময় আরো কমে দাড়াঁয় ১৪.৬% এবং  ২০১১-তে তা আরো নেমে আসে ৯.৬% এ। অবশ্য বছরখানেক আগে এক অন্তবর্তী রিপোর্টে পরিসংখ্যা ব্যুরো জানিয়েছে, গত ১০ বছরে হিন্দু সংখ্যা ২% বেড়েছে। এও যদি ধরে নেয়া হয় তাহলে বলতে হয় পাকিস্তানি আমলের মতোই বাংলাদেশ থেকেও সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ ঘটেছে, ঘটছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সংখ্যালঘু ভিন্ন অন্য জনগোষ্ঠীর লোকজনও ভারতে আশ্রয় নিতে পারে, তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী থেকে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু কথিত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী বাদ পড়ে থাকলে সেক্ষেত্রে ধর্মীয় বিভাজনের পথে না গিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বা দ্বি-পক্ষীয় রাষ্ট্রীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে এর সমাধান হলে ভালো হতো। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মনে করে, ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে অখন্ড ভারত খন্ডিত হয়ে আজ তিনটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হলেও সংখ্যালঘু সমস্যাবলীর সমাধান আজও হয় নি বরং তা’ অধিকতর জটিল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যে ঘোষিত অভিপ্রায়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর দেশের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় উত্থাপন করেছিলেন, যা রাজ্যসভায়ও পাস হয়েছে তাতে’ কার্যতঃ বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ কতখানি রক্ষিত হবে তা’ ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মনে করে। এমনতরো পরিস্থিতিতে বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারী দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে প্রধানমন্ত্রী তার বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক । অন্যান্যের মধ্যে কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, জে এল ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, মঞ্জু ধর, মনীন্দ্র কুমার নাথ, এডভোকেট তাপস পাল, কিশোর মন্ডল, রবীন বসু, দিপংকর ঘোষ, পদ্মাবতী দেবী, চন্দন বিশ্বাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status