দেশ বিদেশ

উত্তাল আসাম, নিহত ২

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে উত্তাল আসাম। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে জ্বলছে আসাম। নিহত হয়েছেন দু’জন। ওদিকে এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং বিভিন্ন আদিবাসী গ্রুপগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। তাদেরকে তিনি সমর্থন দিয়ে বলেছেন, সহিংসতার নেপথ্যে রয়েছে একটি নেতিবাচক শক্তি। তাদেরকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছি আমরা। তার ভাষায় আমরা জানি, আসুর ‘ডিএনএ’তে ভাঙচুর ও সহিংসতার কোনো স্থান নেই। সহিংসতায় আসু বা অন্য কোনো আদিবাসী গ্রুপ জড়িত নয়। ওদিকে অনলাইন বিবিসি বলছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসামে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে রাতভর বিক্ষোভের পর ওই রাজ্যে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এই আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী গুয়াহাটিতে কারফিউ ভঙ্গ করে দোকানপাট ও যানবাহনে আগুন দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বহু লোক। বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকটি রেল স্টেশনেও ভাঙচুর হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি বলছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়ার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করা হয়েছে। ভারতের সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় বৃহস্পতিবার এই আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই আসামের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাজ্যের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে কাশ্মীরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিটকে আসামে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালসহ বেশ ক’জন বিজেপি নেতার বাড়িঘরে হামলা করেছে বলে রয়টার্স বলছে। উত্তেজনা প্রশমনের জন্য রাজ্যের ১০টি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল সংসদে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা সিএবি নামে পরিচিত এই বিতর্কিত বিলটির বিরোধিতা করেছে। ভারতের বিভিন্ন মুসলিম দলের নেতারাও বিলটিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
আসামে যারা এই বিলের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের বক্তব্য, এই বিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসামে আরো বেশিসংখ্যক বাঙালি হিন্দুর আসার পথ খুলে দেয়া হয়েছে। আসামে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় অসমীয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাভাষী জনগণের বিরোধ চলছে। আসাম অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, এই আইনটি নিয়ে আসামের বাসিন্দাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ইংরেজি এবং অসমীয়া ভাষায় পাঠানো একের পর এক টুইট-বার্তায় মি. মোদি বলছেন আসাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ছয়কে রক্ষা করার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। এই চুক্তিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাজনৈতিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং ভূমির অধিকারকে হেফাজত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে পেশ করা এক আর্জিতে আইউএমএল বলছে, এই আইনটি ভারত সংবিধানের সাম্য, মৌলিক অধিকার এবং জীবনের অধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলোকে ভঙ্গ করছে।
ওদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, দু’দিন ধরে গুয়াহাটিতে যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জড়িত কালো পোশাক পরা একদল মানুষ। তারা মুখোশ পরা। দলে ২০ বা ৩০ জনের ছোট্ট গ্রুপ করে তারা র‌্যালিতে যোগ দেয়। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী হিসেবে ভাব ধরে। স্লোগান দেয়। যখনই তারা একটি পুলিশ পোস্ট অতিক্রম করে তখনই তারা সহিংস হয়ে ওঠে এবং যানবাহনে আগুন দেয়। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশে রদবদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। কমপক্ষে তিনটি সংগঠনের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। তবে ওই সংগঠনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা সব রকম ব্যবস্থা নেবো। অন্য রাজ্য থেকে বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে আনা হচ্ছে রাজ্যে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status