প্রথম পাতা

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প কে?

লুৎফর রহমান

৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

ক্যাসিনোসহ অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের আলোচনার মধ্যেই আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। দ্রুতই কাউন্সিল করে সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়া হয়েছে। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি খুব একটা। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নতুন কমিটিতে শুদ্ধি অভিযানের ছাপ স্পষ্ট। আগামী ২০ ও ২১ শে ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। তিন বছর পর হতে যাওয়া এই সম্মেলনেও থাকছে বড় ধরণের চমক। বর্তমান কমিটিতে আছেন এমন অনেকে বাদ পড়বেন। যুক্ত হচ্ছেন শুদ্ধ ইমেজের নেতারা। এতে নতুন প্রজন্মের আকাঙ্খা গুরুত্ব পাবে বেশি। রেকর্ড ৩৮ বছর ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসা টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ফের সভাপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন এটি প্রায় নিশ্চিত। দলের কাউন্সিলর এবং নেতাকর্মীদের চোখে তার বিকল্প আর কেউ নেই। ফলে সভাপতি পদ নিয়ে কোন আলোচনা নেই।

কাউন্সিলকে সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন? দ্বিতীয় বারের মতো এ পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন না-কি দল তার বিকল্প খুঁজে নেবে? যদিও এ প্রশ্নের ষ্পষ্ট কোন ধারণা নেই নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের রীতি অনুযায়ী কাউন্সিলররা সর্বসম্মতভাবে একজনকে সভাপতি নির্বাচন করেন। সর্বশেষ কাউন্সিলগুলোতে এ পদে এক বাক্যে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। একই সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার ভারও তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন কাউন্সিলররা। দলীয় সূত্র বলছে, এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকেই চেয়ে আছেন নেতাকর্মীরা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাকে বেছে নেবেন এটা একান্তই শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। দল ও সরকারের প্রয়োজনে তিনি এ পদে পরিবর্তন আনতে পারেন আবার বর্তমান সাধারণ সম্পাদককেই রেখে দিতে পারেন। কারণ এর আগে অনেকেই দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার। মো.জিল্লুর রহমান চার দফা ছিলেন ওই পদে। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুর রাজ্জাক দু’বার করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দু’দফা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার কি হবে? তা এখনও আটকা ‘যদি’ ও ‘তবে’র মধ্যে। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন শীর্ষ এ পদে সত্যিই যদি পরিবর্তন আসে তাহলে ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প কে? গত তিন বছর ধরে কাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও। দুই দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে গিয়ে তিনি ছুটে চলেছেন বিরামহীন। মাঝে শারীরিক অসুস্থতা তার পথচলায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটিয়েছিল। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। দল ও সময়ের প্রয়োজনে সারা দেশেই ছুটে চলেছেন। তবে নির্ধারিত সময়ে অনেক জেলা ও উপজেলায় কাউন্সিল না হওয়ায় ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি বা অস্বস্তি আছে তার। কিন্তু তিনি নেমে নেই। যে করেই হোক কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চান। তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলগুলো করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। সংঘাত সংঘের্ষর ঘটনাও ঘটছে। যদিও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। দলীয় সূত্র বলছে, দেশজুড়ে প্রবীণ অনেক নেতা জেলা, উপজেলা, শহর ও মহানগর পর্যায়ের কমিটিতে আছেন।

তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় যেসব গুণ থাকার কথা তার পুরোটিই আছে ওবায়দুল কাদেরের। তবে শারীরিক অবস্থার বিষয়টি দলের অনেকে সামনে আনছেন। তারা বলছেন, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করার মতো শারীরিক ঝুঁকি তার নেয়া ঠিক হবে না। এছাড়া দল টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় অনেক দিক থেকে দায়িত্ব ও ঝুঁকি বেড়েছে। সামনে যে পরিস্থিতি কঠিন হবে না এটা মানছেন অন্তত তৃণমূলের নেতারা। এ অবস্থায় সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে সার্বিক বিবেচনাই কাজ করবে বলে মনে করে তৃণমূল। তাদের বিবেচনায় এখনও ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প নেই। কিন্তু যদি পরিবর্তন আসে, নেত্রী যদি পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে কে আসতে পারেন? এর মধ্যে যে নামগুলো আলোচনায় তার অন্যতম কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিগত কাউন্সিলেও তার নামটি এসেছিল। নেতাকর্মীদের কাছে তার ক্লিন ইমেজের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সজ্জন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। বর্তমান কমিটির তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাকের দু’জনকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তাদের সাধারণ সম্পাদক পদে আসার সম্ভাবনা কম। বর্তমান দায়িত্বে তাদের কেউই বড় কোন চমক দেখাতে পারেননি।

কারও কারও বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগও আছে। সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আলোচনায় নাম আছে শুধু একজনের। তিনি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠা মিস্টার চৌধুরী নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজ ধরে রাখতে পেরেছেন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এতে সরকার প্রধানেরও সুনজরে আছেন তিনি। এছাড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক সক্ষমতার বিষয়েও তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দলীয় ফোরামে আলোচনা আছে। সময়ের প্রয়োজনে তরুণ খালিদ মাহমুদকেও দেখা যেতে পারে এ পদে। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নামও আছে জোর আলোচনায়। মন্ত্রীত্বের পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা হাছান মাহমুদ নিবেদিত প্রাণ। তিনি তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন সুচারুভাবে। এছাড়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত নেতাদের বাইরে নতুন কাউকেও দেখা যেতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে। দলের নেতৃত্বের বিষয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সভাপতি ছাড়া অন্য যে কোন পদে পরিবর্তন আসতে পারে। নতুন কমিটিতে স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হবে।

এদিকে আগামী বছর জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী পালন করায় এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে খুব একটা ঝাকজমক থাকছে না। ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির পরিধি ও গঠনতন্ত্রেও কোন পরিবর্তন আসছে না। গতকাল এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, নতুন নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। অতীতে যারা বিতর্কে জড়িয়েছেন, দুর্নাম কামিয়েছেন তাদের কারও স্থান হবে না নতুন কমিটিতে। নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে যারা চলতে পারবেন এমন নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন এমন অনেককে দলীয় দায়িত্ব না-ও দেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, আগামী ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের পরদিন (২১শে ডিসেম্বর) হবে নেতৃত্ব নির্বাচন। কাউন্সিল সফল করতে বেশ কয়েকটি টিমের সদস্য হয়ে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলন বিষয়ে তথ্য জানাতে ইতোমধ্যে একটি ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status