খেলা

জন্মদিনে দেশকে ফাতেমার উপহার

ভারোত্তোলনে মাবিয়ার পর জিয়ারুল

সামন হোসেন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

চারদিন পর এসএ গেমসে গতকাল সকালে বাংলাদেশের স্বর্ণের খরা কাটান মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। পোখরার এস.আর.কে.সি. ব্যানকুয়েটে মাবিয়ার স্বর্ণ জয়ের পরই সেখানে আবারো জাতীয় সংগীত বাজান জিয়ারুল ইসলাম। জিয়ারুলের উচ্ছ্বাসের রেশ কাটতে না কাটতে কাঠমান্ডুর নয়াবাজার কীর্তিপুরে সোনা জেতেন ফাতেমা মুজিব। প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হওয়া ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সাবের এককে সেরা হন বাংলাদেশের এই অ্যাথলেট। ত্রয়োদশ এসএ গেমসে  এটি বাংলাদেশের সপ্তম স্বর্ণ পদক।

২০১০ সালে এসএ গেমসে ছেলেদের ভারোত্তোলনে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন হামিদুল ইসলাম। ফেডারেশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে এবার দলে নেই হামিদুল। তার ইভেন্টে এবার সোনা জিতলেন জিয়ারুল ইসলাম। ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে জিয়ারুল ইসলাম হারান স্বাগতিক নেপালের বিশাল সিং বিস্টকে। স্ন্যাচে জিয়ারুল তোলেন ১৩৫ কেজি। এরপর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তিন লিফটে তোলেন ২৬২ কেজি। এই বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতেন ভুটানের কেনলি গায়েলশেন। প্রথমবারের মতো ভারোত্তোলনে অংশ নিয়ে বাজিমাত করে জিয়ারুল বলেন, ‘এটা আমার জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক আসর। প্রথম আসরেই  সোনা জিতেছি। এজন্য আল্লাহ্‌র কাছে অশেষ শুকরিয়া। কোচ মাহবুব ভাই আমার ওপর ভরসা রেখেছিলেন এবং আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। এতেই আমার সাফল্য এসেছে।

 দিনাজপুরের কিষাণবাজারের ছেলে জহিরুলের ভারোত্তোলনে আগমন মনোয়ার নিন্দা ও ফরহাদ হোসেনকে দেখে। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে অংশ নিয়েছিলেন দিনাজপুরের এই দুই ভারোত্তোলক। ২০১০ সাল প্রথম খেলা শুরু করেন ভারোত্তোলক জিয়ারুল ইসলাম। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ভারোত্তোলনে নিয়মিত হন তিনি। মাত্র তিন বছর নিয়মিত প্রশিক্ষণের পরই এই সাফল্য এসেছে জানিয়ে জিয়ারুল বলেন, দেশের সম্মান বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমার জন্য জাতীয় সংগীত বেজেছে। এজন্য আমি অনেক আনন্দিত।

এবারই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ফেন্সিং। প্রথমবার দেশের বাইরে এসেছেন ফাতেমা মুজিব। প্রথমবার আন্তজার্তিক কোনো আসরে অংশ নিয়ে নিজের জন্মদিনে বাজিমাত করলেন এই ফেন্সার। কাঠমান্ডুর নয়াবাজার কৃতিপুরে গতকাল সাবের এককে নেপালের প্রতিযোগী রাবিনা থাপাকে ফাইনালে ১৫-১০ পয়েন্টে হারিয়ে প্রথম সোনা জয়ের স্বাদ নেন ফাতেমা মুজিব। ভারতের দিয়ানা দেবীকে সেমিফাইনালে ১৫-১১ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন ফাতেমা।

দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে ফেন্সিং প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হলেও এর আগে ইনচন এশিয়ান গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশের ফেন্সাররা। কিন্তু ফেডারেশন কর্মকর্তাদের অজ্ঞতায় সেবার ম্যাটেই নামতে পারেননি ফেন্সিং তারকারা। তবে কাল আর ভুল হয়নি। পিচে নেমে নিজেকে সেরা প্রমাণ করেই খেলা শেষ করেন ফাতেমা মুজিব। দেশকে স্বর্ণ এনে দিয়ে ফাতেমা  বলেন, ‘ফেন্সিং রাজকীয় খেলা। খুব ড্রেস পরা থাকে। এটা দেখে খুব ভালো লাগে। এসব থেকেই খেলাটার প্রতি উৎসাহী হন হই।’ ২০০৭ সাল প্রথম বাংলাদেশে এই খেলার প্রচলন শুরু হয়। ২০১৩ সালে বড় ভাই সাদ্দাম মুজিবের উৎসাহে ফেন্সিংয়ে আসেন ফাতেমা। এসএ গেমসের আগে চারবার ন্যাশনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যাশনালে ৪টা সোনা জিতেছি। দলগত ৭টা। রুপা ৯টা। আমার আত্মবিশ্বাস ভালো ছিল। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া নিয়ে ভয়ে ছিলাম’। স্বর্ণ জয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ফাতেমা বলেন, আমি প্রথমে লীগে খেলি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। এরপর ভারতের প্রতিযোগীকে হারানোর পর নেপালের খেলোয়াড়কে হারিয়েছি। প্রথমবার বিদেশে এসে সোনা জিতলাম।

মুক্তিযোদ্ধা পিতা খোরশেদ আলীর দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে ফাতেমা নিজের জন্মদিনের কথা লুকিয়েই কাল খেলতে নেমেছিলেন। কারণ হিসেবে স্বর্ণ জয়ী এই কন্যা বলেন, আমার টার্গেট ছিল স্বর্ণ জিতেই আমি আমার জন্মদিনের কথা সবাইকে জানাবো।  আমি আমার জন্মদিনে নিজেকে সেরা উপহার দিবো বলেই এটা করেছি। প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিয়ে বাজিমাত করা ফাতেমা নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে বলেন, আমার টার্গেট বড়। এখন আমি বেশি বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চাই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status