শেষের পাতা

সংকট সামলাতে ১৬ ফ্লাইট মালয়েশিয়ায়, বিমান টিকিট যেন ‘সোনার হরিণ’

মিজানুর রহমান

৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ায় অবৈধ হিসাবে নিবন্ধিত ৩২ হাজার বাংলাদেশিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ফিরতে হচ্ছে। না হয় তাদের
জেল এবং বিশাল জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। মাহাথির সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৭০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের দেশটি ছাড়তে হবে। এরইমধ্যে ২৯ হাজার বাংলাদেশি ফেরা সংক্রান্ত প্রশাসনিক যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু তারা ফিরতে পারছেন না ঢাকাগামী ফ্লাইটের টিকেটের আকাশচুম্বি দামের কারণে। পাঁচগুন দামেও টিকেট মিলছে না- এমন অভিযোগও আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দূতাবাস ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদবিরে টিকেট সঙ্কট নিরসনের চেষ্টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কুয়ালালামপুর রুটে অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তরফে এ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। জানানো হয়েছে- মালয়েশিয়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরতে যেয়ে টিকিট সঙ্কটের কারণে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সহায়তায় ও সুস্থভাবে তাদের বাড়ি ফেরাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কুয়ালালামপুর রুটে ১৬টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বোয়িং-৭৩৭ ও ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দিয়ে এসব ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলাম গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, এখন পর্যন্ত কতজন ফিরেছেন, আর কতজন ফ্লাইটের অপেক্ষায় রয়েছেন? তা বুঝার চেষ্টা করছে দূতাবাস টিম। কিন্তু এখনও এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়ানি। দূতাবাসের চিঠির প্রেক্ষিতে সরকারের সিদ্ধান্ত মতে, বিমানের অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানো হবে। রাষ্ট্রদূত আশা করেন এতে সঙ্কট অনেকটাই লাঘব হবে। তিনি এ-ও বলেন, ফ্লাইট জটিলতায় একজন বাংলাদেশিও যেনো আটকা না পড়েন সেটাই তাদের চাওয়া। এ জন্য তারা প্রতিনিয়ত এ নিয়ে ঢাকাকে আপডেট করছেন। পরিস্থিতি বুঝে আরও ফ্লাইটের প্রয়োজন হলে সেটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকাকে জানানো হবে এবং ব্যবস্থা হবে বলে আশা করেন রাষ্ট্রদূত। এদিকে বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত ফ্লাইটে গড়ে ২৫০ করে সিট রয়েছে। ১৬টি বিশেষ ফ্লাইটে ৪ হাজারের মত বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। বাকীরা নিয়মিত ফ্লাইটে ফিরবেন।

এ বিষয়ে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি বিমানের সবসময়ই দায়বদ্ধতা রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের মানুষ ও প্রবাসী শ্রমজীবী ভাই-বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এ বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে।’ বিমান সচিব মো. মহিবুল হক ওই প্রয়াসের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিমানের সম্পৃক্ততায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তারা যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত রয়েছেন। উল্লেখ্য, সপ্তাহে ঢাকায় ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকা আসার ফ্লাইটে কোনো আসন খালি নেই তাদের। ১৮ ডিসেম্বর পরবর্তী ফ্লাইটগুলোতে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার (ওয়ানওয়ে) টাকায় বিক্রি হচ্ছে টিকিট। এয়ার এশিয়া সপ্তাহে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংস্থাটির ঢাকাগামী ফ্লাইটে ডিসেম্বর মাসের সব সিট বিক্রি হয়ে গেছে অনেক আগেই। মালিন্দো এয়ারের কুয়ালালামপুর-ঢাকা ওয়ানওয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকায়। সপ্তাহে ১২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা। বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলা সপ্তাহে ৭টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করে কুয়ালালামপুর রুটে।

কিন্তু তাদেরও ঢাকায় ফেরার ফ্লাইটের সব সিট বিক্রি হয়ে গেছে। ইউএস-বাংলা অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদার কারণে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট বাড়িয়েছে। তাতেও তারা চাপ এড়াতে পারছে না। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রচ্যের পর এককভাবে মালয়েশিয়াই হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমবাবাজার। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈধভাবে কাজ নিয়ে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে গেছেন। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে অনিয়মিত বা অবৈধ হড়ে পড়েছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ফরিয়াদের ধান্দা আছে। আছে নানা অনিয়মও। বিশেষ করে বিগত সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে বাংলাদেশি একটি চক্র সিন্ডিকেট করে ওই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। নতুন সরকার আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত চুক্তি বাতিল করে শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। ওই বন্ধ বাজার খুলতে ঢাকার তরফে জোর প্রচেষ্টা চলছে। মাহাথির সরকার ঘোষিত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসুচি শেষ হওয়ার পর দেশটিতে বৈধভাবে বাংলাদেশিদের প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status