এক্সক্লুসিভ
কোর্টপয়েন্ট নিয়ে সিলেটে টানাটানি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:২২ পূর্বাহ্ন
শ্রমিক নেতা জাকারিয়া কোর্টপয়েন্টের কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ। নগর পিতা আরিফুল হক চৌধুরীও নাছোড়বান্দা। কোর্ট পয়েন্টে সিটি বাস সার্ভিসের কাউন্টার খুলবেনই তিনি। ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াও চালিয়েছেন। বাধা দিয়েছেন জাকারিয়া ও সহযোগী পরিবহন শ্রমিকরা। এই অবস্থায় জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বারস্থ হয়েছেন মেয়র। অটোরিকশা শ্রমিক জোটও নেমেছে মাঠে। তারাও চায় কর্তৃত্ব। এ ঘটনার রেশ ধরে দক্ষিণ সুরমায় হয়েছে সংঘর্ষও। এ নিয়ে পরিবহন সেক্টরে ঘটছে নানা নাটকীয়তাও। সিলেটের আরেক শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ ফলিক ইতিমধ্যে ‘পদবি’ ব্যবহারে জাকারিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে। তবে জাকারিয়া জানিয়েছেন, নগরবাসীর সেবা নয়, ব্যবসায়ীক স্বার্থ হাসিলের জন্য তার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এসব ঘটনায় তিনি আদালতে মামলাও করেছেন। সিলেটের আলোচিত কোর্টপয়েন্ট। এক সময় ওই পয়েন্ট ছিল সিলেটের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তার আগে দাবি আদায়ের নানা আন্দোলন আবর্তিত হতো কোর্ট পয়েন্টকে ঘিরে। শিরিষ গাছের ছায়ায় সভা-সমাবেশের মুখ্য স্থান হিসেবে কোর্ট পয়েন্ট ছিল সবার কাছে পরিচিত। এখন কোর্টপয়েন্টের সেই জৌলুস নেই। কোর্টপয়েন্ট দখলে নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা সহ হালকা যানবাহনের মূল পয়েন্ট বলতে কোর্ট পয়েন্টকে বুঝায়। এই পয়েন্টে এক দশক ধরে গাড়ি রেখে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন শ্রমিক নেতা জাকারিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ওখান থেকে কমপক্ষে ১০টি রুটে ছেড়ে যায় সিএনজি অটোরিকশা। এই স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে সিলেটবাসীর দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। সাম্প্রতিক সময় সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট থেকে সিএনজি অটোরিকশাকে সরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. জাকারিয়া অভিযোগ করেছেন, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার নিজের হাতে গড়া সিটি বাস সার্ভিসের মূল স্ট্যান্ড হিসেবে কোর্ট পয়েন্টকে ব্যবহার করতে চাইছেন। ওই কোম্পানিতে তার সিংহভাগ শেয়ার রয়েছে। যারা শরিক রয়েছেন তারাও তার নিকটজন। এ কারণে মেয়র গত সপ্তাহে হঠাৎ করে সিএনজি অটোরিকশা সরিয়ে দিতে ট্রাক সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে আসেন। এমনকি সিটি বাস সার্ভিসের কাউন্টার নির্মাণের জন্য কাজও শুরু করেন। এই অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তিনি সরে যান। তিনি অভিযোগ করেন এরপর মেয়র পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিপক্ষকে তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে নগরীতে সংঘর্ষও হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, শ্রমিক নেতা জাকারিয়ার কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ ব্যাপারে প্রশাসনিক সহযোগিতা চান। পাশাপাশি তিনি সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও দাপটবাজ শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ ফলিকের কাছে এ ব্যাপারে বিচারপ্রার্থী হন। এতে ফলিক বিষয়টি নিয়ে জাকারিয়ার সঙ্গে কথা বললেও কোনো লাভ হয়নি। বরং জাকারিয়া তার নিজের অবস্থানে অটল থাকেন। সাফ জানিয়ে দেন কোর্ট পয়েন্ট তিনি ছাড়বেন না। এ ঘটনায় জাকারিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন সেলিম আহমদ ফলিক। এ ঘটনায় তিনি ইতিমধ্যে জাকারিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন। গতকাল প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেলিম আহমদ ফলিক সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়াকে সংগঠন বিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলিক বলেন, বুধবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে এক সভা চলাকালে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্যপরিষদ ও ঐক্যপরিষদের বিভাগীয় কমিটির পদবি ব্যবহার করে বক্তব্য প্রদান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার কর্মসূচির সঙ্গে শ্রমিকদের অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কোনো সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা নেই। ভবিষ্যতে নিজের নেতৃত্বাধীন কর্মসূচিতে শ্রমিকদের অভিভাবক এই দুই সংগঠনের নাম ব্যবহার না করতে জাকারিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সিলেটে অটোরিকশা শ্রমিকদের দুটি সংগঠন। জাকারিয়ার অংশের সংগঠন হচ্ছে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। তাদের মূল অবস্থান নগরের উত্তর অংশে। আর মো. মতছির আলীর অংশের সংগঠনের নাম হচ্ছে সিলেট জেলা অটো টেম্পো, অটোরিকশা শ্রমিক জোট। তাদের অবস্থান হচ্ছে নগরীর দক্ষিণ অংশে। দীর্ঘদিন ধরে সহাবস্থান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় শ্রমিক জোটের নেতারা কোর্ট পয়েন্টের কর্তৃত্ব চায়। জাকারিয়া অংশের নেতারা জানিয়েছেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ইন্ধনে কয়েক দিন আগে মতছির আলী ও সহযোগীরা কোর্ট পয়েন্টে নামার চেষ্টা করে। এ সময় কোর্ট পয়েন্টের শ্রমিকরা প্রতিবাদী হলে তারা দক্ষিণ সুরমায় গিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। তবে সিলেট জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশা শ্রমিক জোটের সভাপতি মো. মতছির আলী জেলা প্রশাসক ও মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত পত্রে জাকারিয়ার বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ করেছেন। বুধবার প্রেরিত ওই পত্রে তিনি দাবি করেন কিছুদিন যাবৎ শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয়, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করেন। তারা হিংসাত্মকভাবে শ্রমিকদেরকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে নাজেহাল এবং বিভিন্ন স্থানে অন্যায়ভাবে চাঁদা আদায় করে হয়রানি শুরু করে। বর্তমানে সভাপতি মো. জাকারিয়া শ্রমিকদের জোরপূর্বক সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণের চাপ সৃষ্টি করছেন। তিনি প্রকাশ্যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এদিকে বুধবার সিলেটের নগর ভবনে নগরের উন্নয়ন নিয়ে নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানেও উঠে আসে কোর্ট পয়েন্টের কথা। সিএনজি অটোরিকশা চালকের কর্তৃত্বের কথা। এ সময় মেয়র অভিযোগ করে বলেন সিলেটের বিআরটিএ তার কথা শুনছে না। সুতরাং সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক উন্নয়নে তিনি বাধার মুখে পড়ছেন।