শেষের পাতা

এক শিক্ষকের কাছে জিম্মি ৭৫০ পরিবার

পিয়াস সরকার

৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের নিভৃত গ্রাম সর্দারপাড়া। বোদা উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এই গ্রামে মাসখানেক আগে পৌঁছেছে বিদ্যুতের আলো। গ্রামটিতে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ আসার ঘোষণার পর থেকেই জিম্মি করে রেখেছেন এক স্কুলশিক্ষক। নাম তার মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি এই গ্রামের ওমরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
সর্দারপাড়া গ্রামের একাধিক  ব্যক্তি জানান, দরিদ্র পীড়িত গ্রামটিতে বিদ্যুৎ আসার ঘোষণার পরেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ দেবার কথা বলে আদায় করা শুরু করেন অর্থ। এই অর্থ আদায়ের জন্য তিনি বেছে নেন এলাকার গণ্য মাণ্য ব্যক্তিদের। গ্রামটিতে রয়েছে প্রায় ১২ টি মসজিদ। এই মসজিদ কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন তিনি। ৭শ’ ৫০টি বাড়িতে বিদ্যুতের জন্য মিটার বসানোর কথা ছিলো। প্রতিটি বাড়ি থেকে তিনি সংগ্রহ করেন ৪ হাজার ৫শ’ টাকা করে। অল্প কিছু দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে নিয়েছেন ৪ হাজার টাকা করে। কিন্তু পঞ্চগড় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে খবর নিয়ে যানা যায় ফি মাত্র ৪শ’ ৫০ টাকা।

জানা যায়, টাকা দিয়েছেন প্রায় ৫শ’ ৫০টি পরিবার। তাদের বাড়িতে মাখখানেক আগে গেছে বিদ্যুতের লাইন। যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের বাড়িতে আসেনি বিদ্যুতের আলো। শিক্ষক তরিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রভাবশালী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেননি কেউ। যেসব বাড়িতে তিনি টাকা উঠিয়েছেন তার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এখনো ১শ’ ৫০ বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ আসেনি। তাদের কাছ থেকে এখনো অব্যাহত রেখেছেন টাকা উত্তোলন। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এছাড়াও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারাও এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, এই এলাকায় বিদ্যুতের দাবি আমাদের বহুদিনের। ১১ মাস আগে যখন বিদ্যুতের কথা উঠলো। তখন তিনি স্থানীয় এক স্কুল মাঠে সকলকে নিয়ে বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে এমনভাবে তিনি উপস্থাপন করেন যে এখন বিদ্যুৎ না নিলে পরবর্তীতে আর পাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি জানান, অনেকের সঙ্গে কথা বলে লাইনের ব্যবস্থা করেছি। এটা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। এরপর খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পারি ৪শ’ ৫০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা করে নিচ্ছেন। তখন চাইলেও প্রভাবশালী ও বিদ্যুতের প্রয়োজনীতার কারণে আর বিরোধীতা করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই টাকার বাইরে ওয়ারিং করার জন্য আলাদাভাবে সকলকে খরচ করতে হয়েছে।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তরিকুল ইসলাম। বলেন, এই টাকার সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি এলাকার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি নিজেও বাড়িতে লাইনের জন্য ৩২শ’ টাকা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, টাকা বেশি নিয়েছেন মিজানুর রহমান।

তরিকুল ইসলামের অভিযোগের পেক্ষিতে মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের লাইনের জন্য কথা উঠে। তখন এই মিটিংয়ে আমিও ছিলাম। সেখানে সবাই ৪ হাজার ৫শ’ টাকা দেবার কথা বলেন। আমি কোন টাকা নেই নাই। আমি যেহেতু ওয়ারিংয়ের কাজ করি তাই আমাকে ওয়ারিংয়ের কাজ দেবার কথা বলি।

আপনি ওয়ারিংয়ের কাজ করেন, আপনি ফি সম্বন্ধে জানার পরেও সেখানে কিছু বলেননি কেন? এর উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, আমি এই লাইনের টাকার জন্য কোন টাকা নেই নাই। ওয়ারিংয়ের জন্য যে টাকা লাগছে সেই টাকা নিয়েছি। আর আমি ৪শ’ ৫০ টাকা লাগবে এটা জানি। কিন্তু সেখানে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা যে ফি না, সেটা বলার সাহস করে উঠতে পারিনি।
এই এলাকার সংশ্লিষ্ট ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু সালেহ বলেন, আমাদের কাছে এই রকম কোন অভিযোগ নেই। আর লাইন প্রতি নেবার কথা ৪শ’ ৫০ টাকা। তিনি যদি বেশি নিয়ে থাকেন তাহলে অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগ জানালে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status