এক্সক্লুসিভ

বিষ খাইয়ে হত্যার পর গৌরাঙ্গের দুই চোখ তুলে নেয় ভাই-ভাতিজারা

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

পরিবারের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করায় এর শোধ নিতে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে গৌরাঙ্গ দত্ত (৫৫)কে হত্যা করা হয়। বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের উত্তর সরারচর গ্রামে গত ১৭ই নভেম্বর সকালে বড় ভাই দেবতোষ দত্তের (৭০) বাড়িতে বিষ খাইয়ে গৌরাঙ্গ দত্তকে হত্যার পর লাশ ঘরের চৌকির নিচে সারাদিন রেখে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় বড় ভাই দেবতোষ দত্ত, তার ছেলে সুজিত দত্ত আর ভাতিজা হৃদয় দত্ত মিলে গৌরাঙ্গের মৃতদেহ থেকে দুই চোখ উপড়ে ফেলে এবং ডান কান কেটে নেয়। পরে মৃতদেহ প্লাস্টিকের একটি বস্তায় ভরে অটোরিকশায় করে ভাগলপুর-সরারচর সড়কে সরারচর রেলস্টেশনের পাশের একটি পতিত জমিতে ফেলে রেখে যায়। বাজিতপুরে চাঞ্চল্যকর গৌরাঙ্গ দত্ত হত্যাকাণ্ডের এমন নৃশংস বর্ণনা দিয়েছেন খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দেওয়া ভাতিজা সুজিত দত্তের স্ত্রী সোমা দত্ত (৩৫)। সোমবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম তার খাসকামরায় সোমা দত্তের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে রাতে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার এসআই মো. মাহবুবুর রহমান আদালতে সোমা দত্তের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত গৌরাঙ্গ দেবনাথ উত্তর সরারচর গ্রামের মৃত ললিত দত্তের ছেলে। এই কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া নিহত গৌরাঙ্গ দত্তের বড় ভাই দেবতোষ দত্ত, দেবতোষ দত্তের স্ত্রী খেলন রানী (৬৫), ভাতিজা সুজিত দত্ত (৪২), সুজিত দত্তের স্ত্রী সোমা দত্ত, ভাতিজা হৃদয় দত্ত (২০), ভাস্তি জামাই নূপুর সরকার (৪৫), নূপুর সরকারের ভাই শীতল সরকার (৪২) এবং ভাতিজি জেবা (৩৮) এই আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সারোয়ার জাহান জানান, গত ১৮ই নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভাগলপুর-সরারচর সড়কে সরারচর রেলস্টেশনের পাশের একটি পতিত জমিতে দুই চোখ উঠানো এবং ডান কান কাটা অবস্থায় এক অজ্ঞাত লাশের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। পিবিআই এর সহায়তায় ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে লাশের পরিচয় শনাক্ত করে জানা যায়, নিহতের নাম গৌরাঙ্গ দত্ত। তার বাড়ি উত্তর সরারচর গ্রামে। তবে গৌরাঙ্গ দত্ত ২০/২৫ বছর আগে ভিটেমাটি বিক্রি করে দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন গৌরাঙ্গ দত্ত। মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে গত ১৩ই নভেম্বর উত্তর সরারচর গ্রামে বড় ভাই দেবতোষ দত্তের বাড়িতে আসেন তিনি। পরদিন ১৪ই নভেম্বর রাতে এক ঘরে ঘুমানোর সুযোগে নাতনি সম্পর্কের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া পরিবারের এক মেয়েকে ধর্ষণ করেন গৌরাঙ্গ। ধর্ষণের শিকার কিশোরী বিষয়টি পরদিন ১৫ই নভেম্বর সকালে বাড়ির লোকজনের কাছে খুলে বলে। এতে পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে গৌরাঙ্গ দত্তের চোখ তুলে ফেলে শোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। গৌরাঙ্গ দত্তকে কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে ভাতিজা সুজিত দত্ত বাজার থেকে বিষ কিনে আনে। ১৭ই নভেম্বর সকালে খাবারের সাথে সেই বিষ মেশায় সুজিতের স্ত্রী সোমা। পরে বিষ মাখানো খাবার খেতে দেয়া হয় গৌরাঙ্গকে। বিষ মাখানো খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গৌরাঙ্গ। পরে গৌরাঙ্গের মৃতদেহ ঘরের চৌকির নিচে দিনভর ফেলে রাখা হয়। সন্ধ্যায় বড় ভাই দেবতোষ আর দুই ভাতিজা সুজিত ও হৃদয় লাশ থেকে দুই চোখ উপড়ে ফেলে আর ডান কান কেটে নেয়। পরে একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাখে। রাত ১০টার দিকে সুজিত একটি অটোরিকশা নিয়ে এসে বস্তাবন্দি লাশ অটোরিকশায় তুলে ভাগলপুর-সরারচর সড়কে সরারচর রেলস্টেশনের পাশের শহীদ মাস্টারের পতিত জমিতে ফেলে দেয়।

বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সারোয়ার জাহান আরো জানান, লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে থানায় জিডি করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর গত ২২শে নভেম্বর নিহত গৌরাঙ্গ দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত বাজিতপুর থানায় ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। আসামিদের ধরতে তারা গত ২২ ও ২৩শে নভেম্বর দু’দিন টানা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। দু’দিনের এই অভিযানের প্রথম দিন ২২শে নভেম্বর চারজন এবং পরদিন ২৩শে নভেম্বর বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাত আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে ৭দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে চার আসামিকে ৩দিনের এবং তিন আসামিকে ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। চার আসামি দেবতোষ, পুত্রবধু সোমা, মেয়ে জেবা ও জেবার দেবর শীতলকে ৩দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার দ্বিতীয় দিনে সোমবার সোমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বাকি ৩জনকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানোর পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি তিন আসামি সুজিত, নূপুর ও হৃদয়ের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় তাদের পরবর্তিতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া সোমার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার শাশুড়ি খেলন রানীর নাম আসায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সারোয়ার জাহান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status