এক্সক্লুসিভ

৪ দশকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ইরান

মানবজমিন ডেস্ক

৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন

ইসলামিক রেভ্যুলুশনের পর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী রাজনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে ইরান। গত মাস থেকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। জনতার এই ক্ষোভ শক্ত হাতে সামলেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভের প্রথম সপ্তাহেই দেশটিতে নিরাপত্তাবাহিনীর দমন অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮০ জন। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে। ১৫ই নভেম্বর অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বালানি তেলের দাম ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় সরকার। এ সিদ্ধান্তের তিন দিনের মধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। বহু শহরে বিক্ষোভকারীদের দমাতে ফাঁকা গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এদের বেশির ভাগই তরুণ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কেবল মাহশাহরেই ইসলামিক রেভ্যুলুশন গার্ড কোরের সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৪০ থেকে ১০০ বিক্ষোভকারী। নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংগঠন ‘সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরান’-এর উপ-পরিচালক ওমিদ মেমারিয়ান বলেন, ইরান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, বিরোধী দল ও স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বিক্ষোভের প্রথম চার দিনে প্রাণ হারিয়েছেন  অন্তত ১৮০ থেকে ৪৫০ জন। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত হয়েছেন ২ হাজারের বেশি। আটক করা হয়েছে অন্তত ৭ হাজার মানুষকে।

ইরানে সর্বশেষ বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছিল ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর। সে সময়ও বিক্ষোভকারীদের কঠোর হস্তে দমন করেছিল সরকার। ১০ মাসে নিহত হয়েছিল ৭২ জন। সে তুলনায় বর্তমানের বিক্ষোভ দমনে সরকারের পদক্ষেপ শিহরণ জাগিয়ে তোলে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সমপ্রতি তা ফের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে প্রকাশ পাচ্ছে হতাহতের খবর।

বিক্ষোভকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠই নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষ। সামপ্রতিক বছরগুলোয় ইরানে দ্রব্যমূল্য অত্যাধিক বেড়েছে। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির তেল ও ব্যাংক খাত। ফলস্বরূপ চাপ পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে ও তার পরিণতি ভোগ করেছেন দেশবাসী।

এখন পর্যন্ত সামপ্রতিক বিক্ষোভে হতাহত, আটক হওয়া ব্যক্তিদের কোনো সংখ্যা জানায়নি সরকার। উল্টো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর দেয়া সংখ্যাগুলোকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ বলে সমালোচনা করেছে। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দেলরেজা রহমানি ফাজলি দেশজুড়ে অস্থিরতার কথা স্বীকার করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালিত টিভিতে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ইরানের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ২৯টিতেই বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হামলা হয়েছে ৫০টি সামরিক ঘাঁটিতে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় একাধিক নিরাপত্তাকর্মী নিহতের খবরও প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি আরো জানান, সব মিলিয়ে ৭৩১টি ব্যাংকে হামলা হয়েছে। ১৪০টি সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৯টি ধর্মীয় কেন্দ্র, ৭০টি গ্যাস স্টেশন, ৩০৭টি গাড়ি, ১৮৩টি পুলিশের গাড়ি, ১ হাজার ৭৬টি মোটরসাইকেল ও ৩৪টি এম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান আগাম নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক ঝুঁকি পর্যালোচনা বিষয়ক সংগঠন ইউরেশিয়া গ্রুপের ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক হেনরি রোম বলেন, বিক্ষোভকারীদের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল আপসহীন, নির্মম ও দ্রুত। কিন্তু এর মধ্যদিয়ে এটাও প্রমাণ হয়েছে যে, ইরানিরা রাস্তায় নামতে ভয় পায় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status