বিশ্বজমিন

দিল্লিতে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসি অত্যাসন্ন, জল্লাদের সঙ্কট

মানবজমিন ডেস্ক

৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:২২ পূর্বাহ্ন

নয়া দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিকেল পড়ুয়া এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করার অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তদের সময় ফুরিয়ে আসছে। এ ঘটনা নির্ভয়া হিসেবে পরিচিত। ওই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বিজয় শর্মা ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে। সেই আবেদনের বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রেসিডেন্ট তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। যদি আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তাকে ফাঁসি দেয়া হতে পারে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে জল্লাদ নিয়ে। অপরাধীদের রাখা হয়েছে তিহার জেলে। বর্তমানে ওই জেলে কোনো জল্লাদ নেই। এর ফলে জেল কর্তৃপক্ষ খুব বেশি উদ্বেগে আছে বলে এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।

একটি সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, এক মাসের মধ্যে অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে মনে করছেন জেলখানার সিনিয়র কর্মকর্তারা। আদালত ‘ব্লাক ওয়ারেন্ট’ ইস্যু করার পর যেকোন দিন ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। এই ‘ব্লাক ওয়ারেন্ট’ জারি করা হয় অপরাধীদের প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রেসিডেন্ট প্রত্যাখ্যান করার পরে। এর আগে তিহার জেলে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ভারতের পার্লামেন্টে হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত আফজাল গুরুকে। ঘটনাটি রাতারাতি ঘটেছিল বলে তখন একজন জেল কর্মকর্তা ওই ফাঁসি কার্যকর করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু এবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তিহার জেল কর্তৃপক্ষ। ওই সূত্রটি বলেছেন, এবার এই সঙ্কট এড়াতে জেল কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্য জেলখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, ওইসব জেলখানায় কোনো জল্লাদ আছেন কিনা। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশের কিছু গ্রামেও জল্লাদ খোঁজা হচ্ছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া আরো লিখেছে, এবারও তিহার জেল কর্তৃপক্ষ একজন জল্লাদ নিয়োগ দেবে না। ওয়ান-টাইমভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে তারা একজন জল্লাদকে ভাড়া করতে চাইছে। জেলখানার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, খুব কম মামলায়ই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় বলে ভারতীয় ব্যবস্থায় ফাঁসিতে ঝোলানোর ঘটনা খুব কম। তাই পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য একজন জল্লাদ অপ্রয়োজনীয়। তা ছাড়া এই কাজে যে রকম দক্ষতা থাকতে হয়, যেসব শর্ত থাকে সে মোতাবেক একজন পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য জল্লাদ পাওয়াও কঠিন।

নির্ভয়া কান্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে শুধু বিজয় শর্মা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছে। ওই আবেদন দিল্লিতে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। নৃশংসতার ভয়াবহতা উল্লেখ করে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করার সুপারিশ করে দিল্লি সরকার তা পাঠিয়ে দিয়েছে ‘লেফটেন্যান্ড গভর্নরের’ (এলজি) কাছে। এলজি তা পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে তা যাওয়ার কথা প্রেসিডেন্টের কাছে। সর্বশেষে এ বিষয়ে তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন প্রেসিডেন্ট। তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে আদালতকে একটি ‘ব্লাক ওয়ারেন্ট’ জারি করার অনুরোধ করবেন। এই ওয়ারেন্ট জারি হলেই তা অভিযুক্তদের ও তাদের পরিবারকে জানিয়ে দেবেন জেল কর্তৃপক্ষ। বলে দেয়া হবে, তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

তবে তিহার প্রশাসন এক সপ্তাহের সময় দেয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তদের মধ্যে মুকেশ, পবন ও অক্ষয় প্রাণভিক্ষার আবেদন করে নি। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাদেরকে আরো সময় দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত বিহারে একটি চলন্ত বাসের ভিতর মেডিকেল পড়ুয়া এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে বিজয় শর্মা, মুকেশ, পবন, অক্ষয়, রাম সিং ও একজন কিশোর। এরপর তারা ওই ছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে যায় রাস্তার পাশে। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় তখন ভারতজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status