প্রথম পাতা

রহস্য রয়েই গেল

স্টাফ রিপোর্টার

২ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

হলি আর্টিজান হামলা মামলার আসামির মাথায় থাকা আইএসের পতাকা সংবলিত টুপি রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। কারাগারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আসামির কাছে কীভাবে-কার মাধ্যমে পৌঁছালো এ টুপি? এমন প্রশ্ন দেখা দেয় দেশজুড়ে। অতি ষ্পর্শকাতর এই মামলায় আইএস টুপি প্রদর্শনে সুযোগ করে দেয়াকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন অনেকে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি জমা পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কারাগার থেকে টুপি পায়নি জঙ্গিরা। অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট না দিলেও শুরুতে বলা হয় কারাগার থেকেই টুপি নিয়ে আসে জঙ্গিরা। দুই কমিটি সূত্রের ভিন্ন বক্তব্য নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। গত ২৭শে নভেম্বর চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিনে আদালত চত্বরে জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় দেখা যায় আইএস’র পতাকা সম্বলিত টুপি। একই টুপি দেখা যায় আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথায়।

এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। প্রশ্ন দেখা দেয় নিরাপত্তা নিয়ে। কারাগার থেকে আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে জঙ্গি আসামিদের আনা-নেয়া করা হয়। সেখানে কিভাবে তাদের মাথায় আইএস টুপি এলো। এ বিষয়ে ওই দিনই কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ৩১শে জনের সাক্ষ্য সংবলিত ২০ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে গতকাল জমা দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কারা অধিদপ্তরের ভিডিও ফুটেজ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কারারক্ষিদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আইএস’র পতাকা সম্বলিত টুপিটি কারাগার থেকে সংগৃহিত হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রায়ের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ থেকে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রোকন উদ্দীন মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল ওই মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করেন। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আট আসামিকে কারাগারের প্রধান ফটকে আনা হয়। ওই সময় তাদের তল্লাশি করে প্রিজন ভ্যানে উঠানো হয়। আসামিদের চার জনকে হ্যান্ডকাপ পড়ায় পুলিশ। তবে আসামিদের কাউকেই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়নি। আদালতে রায় ঘোষণার পর বেলা ১টা ২০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আসামিদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। কারা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-মহাপরিদর্শক (ঢাকা) টিপু সুলতান ও সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আমীরুল ইসলাম। এদিকে, একই ঘটনায় ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে পুলিশের । পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, কারাগার থেকেই পকেটে করে টুপিটি এনেছিলো রাকিবুল। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পরবর্তীতে আদালতের হাজতখানা থেকে মাথায় টুপি পরে বের হয় এই জঙ্গি। সেই টুপিই এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় সে উল্টিয়ে পড়েছিলো। রায় শেষে জঙ্গি রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশকে জানিয়েছে, টুপিটি কারাগার থেকে এনেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। দেশের ইতিহাসে প্রথম এরকম কোন হামলার ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত ২৭শে নভেম্বর। রায়ে সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

টুপি দিল কে?
হলি আর্টিজান মামলায় আদালতে দণ্ডিত দুই আসামির মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি কীভাবে এল আইনজীবীর এমন বক্তব্যে হাইকোর্ট বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, সর্ষের ভেতরে ভূত। গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেন।
শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, আইএসের টুপি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় আইএসের টুপি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আমি তো আইএস ইস্যুতে অনেক কথা বলেছি। এখন তো আমি নিজেই আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তখন হাইকোর্ট বলেন, মানবাধিকার কর্মীদের বুকে সাহস নিয়ে থাকতে হবে। তখন আইনজীবী আদালতকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা এ বিষয়ে জানে না। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষও বলছে টুপি কারাগার থেকে আসেনি। তাহলে আইএসের টুপি দিল কে? ফেরেশতা নাকি শয়তান? তখন হাইকোর্ট বলেন, সর্ষের ভেতরে ভূত। পরে হাইকোর্ট আইনজীবী জেড আই খান পান্নার নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে (ডিএজি) মৌখিক নির্দেশনা দেন।
 এদিকে, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) লালমাটিয়ার কার্যালয় ছাড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া নির্দেশের ওপর তিন মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক আসককে করা দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আসকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে আসককে আপাতত ওই কার্যালয় ছাড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশটিতে হাইকোর্ট তিন মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। আর আমাদের বলা হয়েছে যে বিষয়গুলো আমরা বলেছি এগুলোর সাপোর্টিং ডকুমেন্টগুলো পরবর্তী তারিখে দাখিল করার জন্য। রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক আসককে করা দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নথি থেকে জানা যায়, লালমাটিয়ার বি ব্লকের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভবনের চারটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে আসক। ওই বাড়ির বিভিন্ন তলায় সাতটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে। গত ১৪ই নভেম্বর সেখানে অভিযান চালায় রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোয় আসককে ২ লাখ টাকাসহ সব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাড়ির মালিককে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর আসকসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী দুই মাসের মধ্যে ভবনটি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status