বাংলারজমিন

বন কেটে চলছে আনারস লেবু বাগানের মহোৎসব

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে

১ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:২১ পূর্বাহ্ন

সিলেট বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া রেঞ্জের কালাছড়া বনে চলছে পাহাড়ি টিলা দখলের মহোৎসব। বনের সরইবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের সৃজনকৃত সেগুন বাগান ধ্বংস করে বন বিভাগের এক হেডম্যান (ভিলেজার) করেছেন আনারস বাগান। ফরেস্ট ভিলেজারদের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী মেতে উঠেছেন বনের টিলা দখল করে বাগান তৈরির এ মহোৎসবে। পাশাপাশি চলছে সংরক্ষিত বনের টিলা এবং গাছগাছালি কেটে লেবু-আনারস বাগান করার কাজ। সংরক্ষিত বনের পাহাড়ি টিলা ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে আনারস ও লেবু বাগান গড়ে তোলা হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে বন বিভাগ।
সরজমিন দেখা যায়, কালাছড়া বনের সরইবাড়ি এলাকার ২০০২ সালের সেগুন বাগানটি একাই দখল করে নিয়েছেন হেডম্যান (ভিলেজার) মাখন উড়াং। তিনি পাহাড়ি টিলার সেগুন বাগান ধ্বংস করে সেই টিলায় সমপ্রতি নতুন করে আনারস বাগান করেছেন। এ টিলার আশপাশের কয়েকটি পাহাড়ি টিলা তার ভাই ও বোনের জামাইসহ নিকটাত্মীয়েরা দখল নিয়ে করেছেন আনারস ও লেবু বাগান। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ফরেস্ট ভিলেজার ইউপি সদস্য আবুল কালাম ওরফে কালাম মেম্বার, নিমাই উড়াং, সান্তু উড়াং, সুমন উড়াং গংদের দখলে রয়েছে সংরক্ষিত বনের একাধিক টিলা। অভিযোগ রয়েছে বন ভিলেজারদের পাশাপাশি স্থানীয় জব্বার, লতিফ, মাম্মদ, বশর গংরাও মিলেমিশে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি টিলা দখল করে আনারস, লেবু ও কলা বাগান করেছেন। বন ভিলেজাররা একের পর এক বনের টিলা দখল করে পাহাড়ি টিলা কেটে বিভিন্ন বাগান করে টিলার মালিক বনে গেলেও রহস্যজনক কারণে বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা  নেয়নি। সেগুন বাগান ধ্বংস ও পাহাড়ি ওই টিলা দখল করে টিলা কেটে আনারস, লেবু ও কলা বাগান করা হলেও রহস্যজনক কারণে দখলদারদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বনের প্রায় সাড়ে ৪শ’ একর পরিমাণের পাহাড়ি টিলা দখল করে নিয়েছে কালাছড়া ফরেস্ট ভিলেজাররা এবং স্থানীয় কয়েকটি পরিবার। এতে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার পকেট যেমন ভারি হয়েছে, তেমনি লাভবান হয়েছেন মাখন-কালাম ভিলেজার গংরা। স্থানীয়রা জানান, অনেক আগে থেকে বনাঞ্চল দেখভালের জন্য বন বিভাগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ফরেস্ট ভিলেজার হিসেবে নেয়। বিনিময়ে তাদের বসতি স্থাপন ও ফসল উৎপাদনের জন্য বন বিভাগের কাছ থেকে মাথাপিছু নির্দিষ্ট পরিমাণের জমি দেয়া হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি টিলা দখলে মেতে উঠে ফরেস্ট ভিলেজাররা। এই সুযোগে বনের বিশাল বিশাল টিলার উপর নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের। তারা বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিলা দখল করে নেয় বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল বিকালে হেডম্যান মাখন উড়াংয়ের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। আলাপকালে ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, অতীতে বনে টিলা দখল করা হলেও বর্তমানে নতুন করে বনে কোনো টিলা দখল বা বাগান করা হয়নি। সামাজিক বনায়ন বিনষ্ট করে আপনি আনারস-লেবু বাগান করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কালাম মেম্বার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, সংরক্ষিত বনে নতুন করে দখলের কোনো সুযোগ নেই। কেউ নতুন করে দখল বা বাগান করে থাকলে সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে উচ্ছেদ করে বন দখলমুক্ত করা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, দখলে কোনো বন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তদন্তক্রমে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status