এক্সক্লুসিভ

প্রসাধনীর বদলে পিয়াজ আনছেন প্রবাসীরা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

আকাল পড়লে যা হয়। অভাব মেটাতে মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে এবার পিয়াজ আনছেন চট্টগ্রামের প্রবাসীরা। গত এক সপ্তাহে পিয়াজ নিয়ে এসেছেন এমন কয়েকজন প্রবাসীর সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রামের বেশ কিছু জায়গায়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর নালাপাড়া এলাকার ওমান প্রবাসী সুরজিত দাশ ৯ কেজি পিয়াজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি ওই এলাকার দেবজিত দাশের ছেলে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে  বোরোনোর পর ব্যাগে পিয়াজ দেখে সুরজতি দাশকে ঘিরে ধরেন অনেকে। এ সময় সুরজতি জানান, ওমানি মুদ্রায় ২.৫০ টাকা দরে তিনি পিয়াজ কিনেছেন।

যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ টাকার সমান। পচে যাওয়ার ভয়ে তিনি ৯ কেজি পিয়াজ কিনেছেন। দেশে পিয়াজের দাম বেশি ও আকালের কথা শুনে প্রসাধনীর বদলে এসব পিয়াজ কিনে আনেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, শনিবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসেন। তার সাথে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার আরও ১১ জন প্রবাসী বন্ধু এসেছেন। তারাও প্রসাধনী ও কাপড়-চোপড়ের বদলে ১০-১২ কেজি করে পিয়াজ কিনে এনেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বাড়ি ফিরেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানার পশ্চিম ফরিদের পাড়া এলাকার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ওই এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।

জাহাঙ্গীর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ৪৭ কেজি পিয়াজ নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। দুবাইয়ের আল আবির মার্কেট থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ কিনেছেন। বাড়ি ফিরে তা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার ৩ হাজার টাকারও বেশি লাভ হয়েছে। তিনি বলেন, লাভের হিসাব কষছি না। দুবাই থেকে ফিরে নিজ গ্রামের মানুষের কাছে কিছু পিয়াজ তুলে দিতে পেরেছি এতেই আমি খুশি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে পিয়াজের কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রির কথা শুনে এবং মা-বাবার অনুরোধে তিনি পিয়াজ নিয়ে এসেছেন। পিয়াজের অভাব মেটাতে গ্রামের মানুষের কাছে তিনি সব পিয়াজ বিক্রি করেছেন। লাভের কথা চিন্তা করলে কমপক্ষে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারতেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আরব আমিরাতের দুবাই প্রবাসী আমি। দু’বছর পরপর বাড়িতে আসি। আসার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড়-চোপড়, জুতা, কসমেটিকস কিনে নিয়ে আসি। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে শুনছি দেশে পিয়াজের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যা সর্বশেষ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দুবাইয়ে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি টাকায় ৪০ টাকা। এ অবস্থায় দেশে আসার জন্য মা-বাবা ও স্ত্রীর কাছে কি কি লাগবে জানতে চাইলে তারা পিয়াজ আনার কথা বলে। তা থেকে মাথায় ঢুকে পিয়াজ নেয়ার কথা। বিমান বন্দরে টিকেট করতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাই দুবাইয়ের বিমানে টিকিটের সাথে ৫০ কেজি মাল বিনা শুল্কে বহনের সুযোগ দিচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৪৭ কেজি পিয়াজ কিনে নিই। ঘরে ফিরে শুরু হয় পিয়াজ নিয়ে কাড়াকাড়ি। নিজের জন্য ৩ কেজি পিয়াজ রেখে ১২০ টাকা কেজিতে সবগুলো বিক্রি করে দিই। গ্রামের লোকেরা কেউ দুই কেজি, কেউ এক কেজি করে পিয়াজ কিনেছেন। দূর-দূুরান্ত থেকেও পিয়াজ কিনতে এসেছেন। ১২০ টাকায় কেজি দরে পিয়াজ কিনেও গ্রামের মানুষ বেজায় খুশি বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম। গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম (৬৭) বলেন, দুবাই থেকে আনা পিয়াজগুলোও ভারতীয় পিয়াজ। ভারত দুবাইতে পিয়াজ রপ্তানী করলেও অতি বন্ধুদেশ বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের আলমশাহপাড়ার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন শুক্রবার রাতে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ১০ কেজি পিয়াজ কিনে নিয়ে এসেছেন। তিনি সপরিবারে থাকেন চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায়। নাসির উদ্দিন জানান, সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামে পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রয় হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫ টাকা দরে। পচে যাওয়ার ভয়ে আমি বেশি পিয়াজ আনিনি। সেখান থেকে পিয়াজ এনে বিক্রয় করলেও অনেক টাকা লাভ হত। একই বিমানে চট্টগ্রামের আরও কয়েকজন প্রবাসী পিয়াজ কিনে নিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই মো. রাসেল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে আসা প্রবাসীরা ব্যাগভর্তি করে পিয়াজ নিয়ে আসছেন। যা এর আগে কখনো দেখিনি। প্রবাসীরা আসার সময় কাপড়- চোপড় ও প্রসাধনী নিয়ে আসতেন আগে। ঘটনাটি অবশ্যই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status