খেলা

হুমকির মুখে বাংলাদেশের টেস্ট ভবিষ্যৎ ‘যেমন বীজ তেমন ফল’

ইশতিয়াক পারভেজ

৩০ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

ইমরুল কায়েস জাতীয় লীগে করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। সাদমান ইসলাম অনিক খেলেছেন ১৭৮ রানের ইনিংস। ভারত সফরের ঠিক আগমুহূর্তে এমন পারফরম্যান্সকে দারুণ প্রস্তুতি না বলে উপায় কি? অথচ এই দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে ভারতের বিপক্ষে চার ইনিংস মিলিয়ে এসেছে মাত্র ৬২ রান। এর মধ্যে ইমরুল কোনো ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। অথচ তামিম ইকবালের পর টেস্টে দেশের সফল ওপেনার তিনি। দেশ ছাড়ার আগে লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটেও ছিল সেঞ্চুরি। মোহাম্মদ মিঠুন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত একজন ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক মুমিনুল হক দেশসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। তারাও চরম ব্যর্থ। শুধু মুশফিকুর রহীম দুই টেস্টে দুটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন। তার ব্যাটে রান এসেছে যুদ্ধ করে। কিন্তু সিরিজে দুই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হার এখন প্রশ্ন তুলছে টাইগারদের টেস্ট খেলার সামর্থ্য নিয়ে। তবে বিসিবির সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমান বিকেএসপির কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন এতটা খারাপ করার দল নয় বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল এতটা খরাপ নয়। সেটি টেস্টেও না। আমার যেটা মনে হয়েছে, তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল তলানিতে। আর এটি একবারে হয়নি। ভিতর-বাহির নানা ঘটনার প্রভাব পড়েছে দলের উপর। আর এমন চলতে থাকলে দেশের টেস্ট ক্রিকেট সত্যি হুমকির মুখে পড়বে।’

টেস্ট সিরিজ শেষে জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি টেস্ট ক্রিকেটারের একই উপলব্ধি। ভারতের যে পেস বোলিং তা আগে কখনোই খেলেননি তারা। এমন উইকেটে খেলেও অভ্যস্ত নয় বাংলাদেশ দল। নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো কিছুর সঙ্গে ভারতের টেস্ট খেলাকে তারা তুলনা করতে চান না। ইমরুল কায়েস দৈনিক মানবজমিনকে এর আগে বলেন-‘আমি ২০০৮ এ দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিষেক ম্যাচে এমন কঠিন পেস বোলিংয়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কিন্তু এরপর এবার ভারতে এসে এমন বোলিংয়ের মুখে পড়েছি। আমাদের টেস্ট খেলার মতো কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।’ জাতীয় দলের অরেক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা  দেশে ১২০ বা  ১৩০ গতির বেশি পেসারের মুখোমুখি হই না। এমন ঘাসের উইকেট কয়টা আছে দেশে? আর এই সিরিজের আগে কি প্রস্ততি ছিল আমাদের? শেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা দলের অনেকেই নেই। বছরে কতটা আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলি আমরা ভারতের মতো? আমরা যে বল দিয়ে খেলি ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সঙ্গেও আন্তর্জাতিক ম্যাচে যে বল ব্যবহার হয় সেটির পার্থক্য আছে।’
ক্রিকেটারদের এসব অভিযোগে সমর্থন জানালেন নাজমুল আবেদিন।

তিনি বলেন, ‘আমি যতটা জানি এই অভিযোগ বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই। এটি সত্যি, দীর্ঘদিন থেকে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের তৈরি করার যে প্রস্ততি সেটি সঠিক নয়। প্রথমত আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে নেই কোনো প্রতিযোগিতা। চারদিনের ম্যাচ নিয়ে কারো তেমন আগ্রহও নেই। এখানে যারা খেলছে তাদের পরফরম্যান্স নিয়েও কোনো আলোচনা হয় না। অনেকেই বলতে পরবে না চার দিনের ম্যাচে নিয়মিত ভালো করছে কে! উইকেটে এখন কিছুটা ঘাস রাখা হচ্ছে। কিন্তু ঘাস থাকলেই যে পেস সহায়ক হবে তাও নয়। সত্যিকারের টেস্ট উইকেট দিতে হবে। সেটি স্পিন  নির্ভরও হতে পারে আবার পেস। এতে ক্রিকেটাররা সব রকম প্রস্তুতি নিতে পারবে। ক্রিকেটারদের যে আত্মবিশ্বাস তলানিতে এর কারণ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, অবহেলা। যখন ওরা দেখলো যে নিজেদের এতদিনে খেলা ক্রিকেটটা ভারতে ভিন্ন তখন আরো আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।’

তাহলে কি ক্রিকেটারদের কোন ভুল ছিল না? তাদেরও তো মনে হয়েছে টেকনিকে দুর্বল। ফাহিম বলেন, ‘স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের ক্রিকেটারদের টেকনিক অনেক দুর্বলতা আছে। তার কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল অবকাঠামো। আবার ওদের কৃতিত্ব দিতে হয় এজন্য যে এত অপর্যাপ্ত সুবিধা নিয়ে তারা মাঝে মাঝে দারুণ খেলে। সেই হিসেবে বলবো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনই পরিবর্তন আনতে হবে।’

তবে এটাও সত্যি যে রাতারাতি বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যেসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব সেগুলোই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক-মুমিনুলদের কোচ নাজমুল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘এতদিনের সমস্যা একদিনে বা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে এখন দ্রুত যা করা যেতে পারে তা হলো বিভাগগুলোকে চারদিনের দল নির্বাচনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। ভালো করলে তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এতে করে তারা ভালো করার জন্য মুখিয়ে থাকবে। পাইপলাইনটাও ঠিক করবে। অন্য ফরম্যাটের সঙ্গে  টেস্ট ক্রিকেটারদের কাঠামো বা সম্মানীর বৈষম্য কমাতে হবে। সবচেয়ে বড় যে বিষয় উইকেট ও সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। যেমন কক্সবাজার থেকে চার দিনের ম্যাচ খেলে বাসে জার্নি করে তাদের জন্য খুলনা বা সিলেটে গিয়ে পরের ম্যাচ খেলতে যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এটি দিবালোকের মত সত্যি- টেস্টে যে বীজ বপন হবে ফলও তেমনই হবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status