মত-মতান্তর

কারিগরি শূন্যপদ পূরণে অভিজ্ঞতা মেধা ও দক্ষতাকে বিবেচনায় নিন

নাজমুল হোসেন

২৬ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

কারিগরি শিক্ষা যেকোনো দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার। কোনো দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার এখনও খুব একটা হয়ে ওঠেনি। উন্নত দেশগুলোর সরকার কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে বলেই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় অর্ধেকই কারিগরি প্রতিষ্ঠান। বিশাল জনসংখ্যার এ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উন্নত জাতিরা অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে রয়েছে। সেন্টার ফর এডুকেশনাল রিসার্চ (সিইআর) এর এক পরিসংখ্যান বলছে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের হার একেবারে তলানিতে। যেখানে জার্মানিতে ৭৩%, জাপানে ৬৬%, সিঙ্গাপুরে ৬৫%, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০%, চীনে ৫৫%, দক্ষিণ কোরিয়াতে ৫০%, মালয়েশিয়ায় ৪৬% এবং বাংলাদেশে ১৪%। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার ২০২০ সালে একে ২০ ভাগ এবং ২০৩০ সালে ৩০ ভাগে পৌঁছানোর চিন্তা করছে। দিনদিন সরকারি পলিটেকনিকে শিক্ষার্থী বাড়লেও ব্যবহারিকে সুযোগ খুব একটা নেই। স্বল্প সংখ্যক সরকারি পলিটেকনিকের তুলনায় কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণে বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে স্বল্পসংখ্যক বেসরকারি পলিটেকনিক ছাড়া বেশির ভাগেরই মানের ঘাটতি রয়েছে। আর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ভালো ল্যাবরেটরি, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব দীর্ঘদিন লেগেই রয়েছে। অন্যদিকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য রয়েছে গাজীপুরে মাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিযোগিতার ভিড়ে সবাই সেখানে সুযোগ পায় না। আর বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা অনেক ব্যয়বহুল। ফলে যারাই এই শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুব কম। অনেকেই আবার বিভিন্ন খণ্ডকালীন বেসরকারি প্রকল্প বা ব্যক্তি মালিকানা প্রকল্পে কয়েক বছর কাজ করে অনেকটা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সরকারি নিয়োগে এই মেধা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কোনো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। কারণ ততদিনে সরকারি চাকরিতে এই দক্ষদের আর আবেদনের বয়স থাকে না। ফলে সরকারের কারিগরি ক্ষেত্রগুলো যোগ্যদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্মমুখী এই শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য অন্তত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু নিয়োগে বয়সসীমা শিথিল থাকা উচিত। তাছাড়া হাতে গোনা দুই-একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও তারা আবেদন করতে পারে না। কারিগরি সেক্টরে কাজ মানেই ব্যবহারিক জ্ঞানে টইটুম্বুর থাকা চাই। অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়নে পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দক্ষতাবিহীন সনদ ভিত্তিক শিক্ষা যেকোনো দেশ ও জাতির জন্য বোঝা। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের এ কথাই জানান দেয়। পিএসসিসহ সরকারি কিছু বিশেষ নিয়োগে বিভিন্ন পদে বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪০ বছর বা বিভাগীয় প্রার্থীদের বেলায় ৪৫ বছর পর্যন্তও চাওয়া হয়। অন্যদিকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের অভাবে প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি অসংখ্য কারিগরি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কারিগরি পদগুলোতে যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দরকার তেমনি এসব অর্জন করতে পর্যাপ্ত সময়েরও দরকার। অসংখ্য কারিগরি চাকরিপ্রার্থী পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ঠিকই অর্জন করে থাকে তবে তাদের আবেদনের বয়স থাকে না। ফলে নিয়োগে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সম্পন্ন লোকের পরিবর্তে সরকারের প্রকৌশল বিভাগগুলো শুধুমাত্র সদ্য পাস করা ও তত্ত্বীয় জ্ঞান সমৃদ্ধ প্রার্থীদেরই পাচ্ছে। যাদের বেশিরভাগই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে রীতিমত অভিজ্ঞতাহীন ও অদক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন এই লোকবলের অভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে, তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, কার্যক্রমে আসছে না গতি। রাজস্ব খাতভুক্ত সকল মন্ত্রণালয়ের প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সকল কারিগরি শূন্যপদে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষ বিবেচনায় বয়সসীমা কমপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ বছর পর্যন্ত রেখে সরকারের দ্রুতই কিছু কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা উচিত। অন্যথায় বয়সের কারণে বিভিন্ন খণ্ডকালীন প্রকল্প থেকে বছরের পর বছর কাজ করা যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞরা দেশের তথা সরকারের কোনো কাজে লাগবে না। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ তথা এই চাকরিপ্রার্থীরা দিনদিন বেকারত্ব বাড়াবে এবং বাড়াচ্ছে। অথচ নিঃসন্দেহে এরাই সরকারের প্রকৌশল বিভাগগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিষয়টি বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিবেন বলে বিশ্বাস করি।
এমন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে কারিগরি শূন্যপদ পূরণে বিশেষ কিছু নিয়োগে দ্রুতই অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

লেখক
প্রকৌশলী ও লেখক
ই-মেইল: [email protected]
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status