অনলাইন

সিইসির ওপর ক্ষুব্ধ ৪ কমিশনারের ইউনোট

অনলাইন ডেস্ক

২৫ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার ওপর ক্ষূব্ধ হয়েছেন চার কমিশনার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করার অভিযোগ তুলেছেন তারা। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইসি সচিবের ওপরও। নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে ওই চার কমিশনার সিইসির কাছে ইউনোট (আন অফিসিয়াল নোট) দিয়েছেন। রোববার চার নির্বাচন কমিশনার যৌথভাবে এ ইউনোট দেন।

ইউনোটে তারা উল্লেখ করেছেন, ইসির কোনও সিদ্ধান্তের ব্যাপারেই তাদেরকে জানানো হয় না। সিইসি আর সিনিয়র সচিব মিলেই সব কাজ করছেন। ইসিতে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এতে সংবিধান লঙ্ঘন বলে নোটে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যৌথ স্বাক্ষরিত নোটে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি কমিশনের ৩৩৯ জন কর্মচারি নিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে চার কমিশনারকে অবহিত করা হয় না।

তারা ইউনোটে উল্লেখ করেন, সচিবালয় এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন- ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। তারা এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ইউনোটে চার কমিশনার উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ই নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার এক পর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় ও এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন। ওই সভায় সচিব আরও বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।

চার নির্বাচন কমিশনারের লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়-

(ক) নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠিত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করবে। এবং সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন।

(খ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন; বরাদ্দকৃত অর্থ যেসব খাতে ব্যয় হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং কমিশন কর্তৃক অনুমোদন আবশ্যক। মাঝে মধ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত কোনো কোনো বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোনো আর্থিক বিষয়ে কমিশনকে অবগতও করা হয় না। যা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন।

(গ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪ সহ অন্যান্য ধারা বর্ণিত কমিশনের ওপর অর্পিত সকল কার্যাদিতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমিশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদুপরি সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তা গত ১৪ নভেম্বরের কমিশন সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লংঘন।

(ঘ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সব বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সকল আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘিœত হবে। একইসঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০১০ এর ৫(১) ধারায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর ন্যস্ত থাকবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে; এবং একই আইনে ১৪(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন।

আইনের ১৪(২) উপধারা মোতাবেক, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি, নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের কাছে দায়ী থাকবেন।

এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইসি, পিএসসি, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, নিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী আমি সিইসির কাছে উপস্থাপন করেছি। ২০০৯-১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

চার কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ঘরোয়া আলোচনা পাবলিকলি আমার বলা ঠিক হবে না। উনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এইটুকু বলতে পারি যা হয়েছে তা আইন ও বিধি অনুযায়ী।

জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০ তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারিকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই পদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় ইসির ব্যয় হয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। জালিয়াতির দায়ে মৌখিক পরীক্ষায় ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইসির জনবল শাখা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চারজন কমিশনার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status