প্রথম পাতা

ব্যাটিংয়ে লজ্জা

ইশতিয়াক পারভেজ, কলকাতা (ভারত) থেকে

২৩ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

ইডেন গার্ডেন্স যেন উৎসবের মঞ্চ। সকাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সমর্থকরা মাঠে ছুটছেন স্লোগান দিতে দিতে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে কে না চায়! সেই ২০০১এ ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে প্রায় এক লাখ দর্শক মাঠে এসেছিলেন। এরপর আর কোনো দিন ভরেনি গ্যালারি। এমনকি সংষ্কারের পর ধারণ ক্ষমতা ৭০ হাজারে নেমে আসার পরও এখানে টেস্টে এমন দর্শক আর হয়নি। অবশেষে ১৮ বছর পর সেই ইডেন কানায় কানায় পূর্ণ। মাঠের বাইরে যেন জনসমুদ্র। টিকিটের জন্য দর্শকরা ছুটছেন হন্যে হয়ে। দুপুরেই মাঠে চলে এলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। উপমহাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে গোলাপি বলে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। তাই নানা রং, ফুল গান আর নাচে সাজানো হয়েছে ইডেন গার্ডেন। এক কথায় এ যেন ক্রিকেটের মহা উৎসব! কিন্তু সেই দিনে ব্যাট-বল হাতে একবারেই বর্ণহীন টাইগাররা। টসে জিতে ম্যাচ শুরু করলেও চলে গিয়েছিল লজ্জার রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে। ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে ৮২ রানে। শঙ্কা ছিল গোলাপি বলের টেস্টে শ্রীলঙ্কার করা সর্বনিম্ন ৯৬ এর আগে আউট হয়ে যাওয়ার। কিন্তু শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা তা হতে দেননি। তবে মাত্র ৩০.৩ ওভার খেলে প্রথম ইনিংস থেমেছে ১০৬ রানে। এমন ব্যাটিং রেকর্ড বলে দিচ্ছে গোলাপি কাঁটায় যেন রক্তাক্ত বাংলাদেশ! জবাব দিতে নেমে বড় লিডের পথে ভারত।

কলকাতার ইডেনে ১২তম গোলাপি বলের টেস্ট জন্ম দিয়েছে নতুন অনেক ইতিহাসের। সন্ধ্যায় গোটা কলকাতা যখন গোলাপি রংয়ের উৎসবে মাতোয়ারা তখন টাইগাররা আঁধারে চেষ্টা করেছে মুখ লুকানোর। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে দেখিয়েছিলেন সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যাটে তা উবে গেছে ইন্দোর টেস্টের মতই। এবার ১৫ রানে ভাঙে টাইগারদের ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় টেস্টেও সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েস আউট হয়ে যান মাত্র ৪ রান করে। এরপর তরুণ সাদমানকে সঙ্গ দিতে এসে অধিনায়ক মুমিনুল, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহীম ফিরে গেলেন সাজঘরে। না, দলের জন্য একটি রানও যোগ করতে পারেননি তারা স্কোর বোর্ডে। তাতে অবশ্য ইতিহাসেও জায়গা করে নিলেন। হ্যাঁ, ইতিহাসটি লজ্জার। টেস্টে এক ইনিংসে ব্যাটিং অর্ডারের তিন, চার ও পাঁচে নামা ব্যাটসম্যানদের শূন্য রানে আউট হওয়ার নজির রয়েছে মাত্র চারটি। তবে সবগুলো ছিল উপমহাদেশের বাইরে। বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায় উপমহাদেশে এ ঘটনা ঘটলো প্রথমবার।

প্রথম সেশনে মাত্র ২২ ওভার খেলা হয়। এর মাঝেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনের ১৩০ বলে বাংলাদেশ তোলে ৭৩ রান। এর মধ্যে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান করা ওপেনার সাদামানও আউট হয়ে যান। আর দলীয় ৬০ রানের সময় ৬ রান করে আউট হন দলের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সাদমানের আগে দলের মিডল অর্ডারের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান মাঠ ছাড়েন দুই অংক না ছুঁয়ে। তবে হাল ধরেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু দুই বার শামি ও ইশান্ত শর্মার বল মাথায় লেগে ২৪ রান করে ছিটকে গেলেন টেস্ট থেকে। তার কনকাশন বদলি হিসেবে মাঠে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজের অবদান মাত্র ৮ রান। লিটনের পর একইভাবে মাথায় বলের আঘাত নিয়ে মাঠ ছাড়েন একাদশে জায়গা পাওয়া ১৯ রান করা নাঈম হাসান। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তাইজুল ইসলাম। ভারতের পেসাররা যেন ইডেনে বাংলাদেশের সামনে যমদূত হিসেবে হাজির হয়েছিল। ইশান্ত শর্মা ১২ ওভারে ২২ রান খরচ করে নিয়েছেন ৫ উইকেট। উমেশ যাদবের শিকার তিনটি ও মোহাম্মদ শামি নিয়েছেন ২ উইকেট।

এই টেস্টের শুরুতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের নয়া প্রেসিডেন্ট ও সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর আয়োজনে এখানে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, কপিল দেবরাও। তবে আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক টেস্ট হয়তো তিন দিনেই শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষে সেই ধারণা এখন আরো বদ্ধমূল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status