অনলাইন

পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটে অচল দেশ

অনলাইন ডেস্ক

২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ২:৫৪ পূর্বাহ্ন

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে দীর্ঘসময়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও ফরিদপুরসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর, ইচাইল, কর্ণী, শুভুল্যা ও কদিম ধল্যা এলাকায় কোন বাস চলাচল করছে না। মহাসড়কে উত্তরাঞ্চলগামী দু’একটি বাস, কিছুসংখ্যক ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চললেও টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি।

ময়মনসিংহের মাসকান্দা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল, পাটগুদাম ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড ও উত্তরবঙ্গ বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকালেরও মতো আজও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকে ময়মনসিংহেও কোনো বাস ঢোকেনি। তবে বিআরটিসি বাসগুলো নিয়মিত চলাচল করেছে।

সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ আশপাশের সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল ৭টা থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পরিবহন শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নেন। পরে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। যানবাহন থেকে চালকদের নামিয়ে দেয়া হয়। পরিবহন শ্রমিকেরা মহাসড়কে এলোমেলোভাবে গাড়ি রেখে দেন।

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও গাজীপুর-কোনাবাড়ি সড়কে দূরপাল্লার গাড়ি চলেনি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় বেশ কয়কজন পরিবহন শ্রমিককে লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। দূরপাল্লার কোনো গাড়ি দেখলেই থামিয়ে দেয়। এছাড়া গাজীপুরের সালনা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মির্জাপুর মাস্টারবাড়ি, ভবানীপুর, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা এলাকার সড়কেও দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি।

গত চারদিন ধরে চলা পরিবহন ধর্মঘটে নাকাল কুষ্টিয়াবাসী। আজ সকাল থেকে বাস চালানোর আশ্বাস দিলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং আজ সকাল থেকে দূরপাল্লার ঢাকাগামী বাসও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়েছে ট্রাক চলাচলও। সকালে মজমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। কেউ ঝুঁকি নিয়ে ইজিবাইক বা নছিমন-করিমন জাতীয় অবৈধ যানে যাচ্ছে।

খুলনার অভ্যন্তরীণ সড়কপথে আজ সকাল থেকে বাস চলাচলের কথা থাকলেও চলেনি। সকালে বাস ছাড়বে এমন খবরে সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রয়েল ও শিববাড়ীর মোড়ে শত শত যাত্রী যাত্রার উদ্দেশ্যে আসে। কিন্তু বেশির ভাগ বাস কাউন্টার বন্ধ। খুলনা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস না ছাড়লেও রূপসা-মোংলা, রূপসা-বাগেরহাটসহ বেশ কিছু সড়কপথে বাস চলাচল করছে।

বগুড়া থেকে অভ্যন্তরীণ সব সড়কপথে যাত্রীবাহী বাস ও সারা দেশে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ পণ্যবাহী সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বগুড়া হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের কোনো কোনো রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বগুড়া থেকে দূরপাল্লার কিছু বাস সকালে ছেড়ে গেছে। ধর্মঘট কর্মসূচির ফলে বগুড়া থেকে জয়পুরহাট, রংপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ-নগরবাড়ি, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এবং উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের সড়কপথে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বগুড়া হয়ে ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-জয়পুরহাট, ঢাকা-রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দু-একটি জেলা থেকে সীমিত কিছু বাস চলাচল করছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন।

পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধের কারণে আজ সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রয়েছে। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিবহন শ্রমিকেরা আন্দোলন করে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে দাউদকান্দি থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধটি ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের উপস্থিতিতে সকল প্রকার স্থানীয় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

পটুয়াখালীতে আজ ভোর থেকে বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। সকালে দূরদূরান্তের যাত্রীরা বাস টার্মিনালে এসে দুর্ভোগে পড়েন। ধর্মঘটের ফলে জেলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ। গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তাদের বিকল্প বিভিন্ন যানে যেতে হচ্ছে। এই সুযোগে ইঞ্জিনচালিত স্থানীয় যান মহেন্দ্র, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের মালিকেরা কয়েক গুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এসব যানে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছে। ভোরে বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ করে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাসচালক ও শ্রমিকেরা বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে দাঁড়িয়ে।

সকাল ৯টা থেকে ফরিদপুরের সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য স্থানের শ্রমিক দলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন ফরিদপুরের বাস শ্রমিকেরা। ফরিদপুর থেকে দূরপাল্লার বাসসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আকস্মিক বাস ধর্মঘটের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই বলে দাবি করেছেন শ্রমিক নেতারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status