বাংলারজমিন

গোয়াইনঘাটে স্কুলের আঙ্গিনায় অবৈধ পশুরহাট

মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট (সিলেট) থেকে

২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৭:৫১ পূর্বাহ্ন

সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৬নং ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ পশুরহাট। ভারত থেকে আসা অবৈধ গরু বিক্রয়ের জন্য হাট তৈরি করে রমরমা বাণিজ্য চলছে সেখানে। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় অবৈধ পশুরহাট সৃষ্ট গবাদি পশুর মল-মূত্রের উৎকট দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে। এ ঘটনায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষানুরাগীসহ এলাকার শিক্ষা সচেতন সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।  অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাস্টার, বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিনসহ একটি চক্রের প্রকাশ্য শেল্টার ও মদতে এই অবৈধ পশুরহাট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বিন্নাকান্দি গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাব্বির আহমেদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ১ বছরের ইজারা পেয়েছেন। জানা যায়, বিদ্যালয় চলাকালে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে পশুরহাটের কার্যক্রম শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগের কোনো অনুমতি না নিয়ে এলাকার বিবেকবানদের বিবেক বর্জিত গর্হিত এমন নোংরা কাজকে উৎসাহিত করায় তাদের ক্ষমতার শেকড় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত শনি ও রোববার দু’দিন সরজমিন পরিদর্শন করলে এই অবৈধ পশুর হাটের নানা চিত্র ফুটে উঠে। পাওয়া যায় অবৈধ বাণিজ্যিক খবরও। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিগত দু’মাস থেকে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে আঙ্গিনায় অবৈধ পশুর হাটে প্রকাশ্যে চলে আসছে পশু বিকিকিনির কার্যক্রম। বিদ্যালয় চলাকালে বিদ্যালয় আঙ্গিনায় পশুর হাটের দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীদের মুখে রুমাল, টিস্যু দিয়ে অতিক্রম করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. রেহান উদ্দিন জানান, কোনো বিদ্যালয় চলাকালে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পশুর হাটের সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা বমি, খিচুনিসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া বায়ু বাহিত হয়ে এ থেকে ছাত্রছাত্রীদের ডায়রিয়া, কলেরা, পেটের পীড়াসহ নানা রোগের আক্রান্ত হওয়া ও পশুর দ্বারা শিক্ষার্থীরা আহত হয়ে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক ও অপর একজন শিক্ষা সচেতন ব্যক্তি জানান, ১৯৩৫ সালে স্থাপিত বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন নোংরা ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। সামান্য কিছু টাকার জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্যরা, প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতরা এমনটা করবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী নির্ভর এ বিদ্যাপীঠের এমন চিত্র কাম্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে কথা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিন জানান, এই পশুর হাট বিদ্যালয়ে কোনো পরিবেশ নষ্ট কিংবা সৌন্দর্যহানির ঘটনা ঘটায় না বরং বিদ্যালয় আর্থিকভাবে লাভবানের একটি খাত। বিদ্যালয় লাভবান হচ্ছে এমনটা বলেলও প্রধান শিক্ষক এ ক্ষেত্রে পশুর হাটের জন্য বিদ্যালয় আঙ্গিনা ইজারা দেয়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থ বিদ্যালয় তহবিলে জমা নিয়েছেন এমন কোনো রশিদ দেখাতে পারেন নি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাস্টার জানান, এটা আমরা বিদ্যালয়ের স্বার্থে ইজারা দিয়েছি। এটা কোনো অন্যায় কাজ নয়। বিদ্যালয়ের স্বার্থে এটা আমরা স্থাপন করেছি। বিদ্যালয় আঙ্গিনায় স্থাপিত অবৈধ পশুর হাটের ইজারাদার সাব্বির আহমদ জানান, বিদ্যালয় সভাপতি ইসমাইল আলী মাস্টার, বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিনসহ ৬ মৌজার অর্থাৎ পশ্চিম রাজের মতামতের ভিত্তিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় মৌখিকভাবে আমাকে এই হাট ইজারা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের সঙ্গে। তিনি জানান, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আর কোথাও এমন নোংরা নজির আছে কি না জানি না। বিদ্যালয় আঙ্গিনায় এই হাট অপসারণ করতে আমি প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি। অপসারণ না করলে আমি তার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নিবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status