শেষের পাতা

দাম কমার খবরে পিয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন আড়তদাররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৯ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

কার্গো বিমানে দেশে পিয়াজ আসছে, ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযান, বাজারে নতুন পিয়াজ আসাসহ বিভিন্ন কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। এই খবরে মজুত করা পিয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন আড়তদাররা। ফলে সব বাজারেই পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে পিয়াজের দাম। তবে খুচরা বাজারে দাম কমার প্রভাব পড়েছে খুবই কম। এদিকে, দাম কমলেও এখনো হাতের নাগালে আসেনি নিম্নবিত্তদের। এ কারণে সুযোগে বেশি লাভের আশায় অনেকেই অপরিপক্ক, এমনকি পাতাসহ ছোট পিয়াজও বাজারে তুলছেন। চাহিদা থাকায় দামও পাচ্ছেন ভালো। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে, গতকাল এ পর্যন্ত আড়াই হাজার ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেছেন, সরকারের নানা উদ্যোগে পিয়াজের বাজার ‘অতি দ্রুত’ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তারা আশা করছেন।
বাজার সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীরা জানান, ইতিমধ্যে বাজারে নতুন দেশি পিয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করছে। পাশাপাশি পিয়াজের কারসাজিকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। এসব কারণে বাজারে পিয়াজের দাম কমছে। দাম কমার এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এদিকে, পাইকারিতে কমলেও খুচরায় চড়া দাম ধরে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে এখনো ২০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ।

জানা গেছে, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর পরই অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পিয়াজের বাজার। ৬০ থেকে ৭০ টাকার পিয়াজ এক লাফে শতক ছাড়ায়। এরপর বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল পিয়াজ। চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর হঠাৎ করেই আবার দাম বাড়তে থাকে। দুই দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজির পিয়াজ বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। খুব দ্রুতই দাম আড়াই শ টাকার কাছাকাছি চলে আসে। গত শুক্র ও শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ২৫০ টাকার উপরে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়। তবে রোববার থেকে কিছুটা কমে আসতে থাকে দাম। গত দুদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কমে ২০০ টাকার নিচে চলে এসেছে। রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কাওরান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মিসর ও মিয়ানমারের পিয়াজের দাম আরো কমেছে। কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। আর আমদানি করা চায়না পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়।

পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে পিয়াজের দাম আরো কমেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা দরে। মিয়ানমারের ভালো মানের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে। আগের দিনেও ২৩০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে দেশি পিয়াজ।
শ্যামবাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ীদের নেতা মেসার্স আলী ট্রেডার্সের পরিচালক সামসুর রহমান বলেন, দেশি নতুন পিয়াজ আসছে। ইতিমধ্যে ঈশ্বরদীতে নতুন পিয়াজ বাজারে উঠেছে। এ পিয়াজ পাইকারিতে কেজি ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এসব পিয়াজের চালান দেশে এলে দাম আরো কমে যাবে। সরকার যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলে শিগগিরই বাজার স্বাভাবিক হবে।

সরজমিন দেখা গেছে, খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে, মিশরের পিয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। পাতাসহ (আকারভেদে) পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। অথচ একদিন আগেও দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা ও মিশরের পিয়াজ ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে ফরিদপুর থেকে এক পিকআপ পাতাসহ নতুন পিয়াজ এনেছেন আতিক। তিনি বলেন, পিয়াজের দর বেশি হওয়ায় কৃষক এখন ছোট পিয়াজও বাজারে আনছেন। দাম বেশি হওয়ায় পাতাসহ পিয়াজের চাহিদাও বেশ। ক্রেতার চাহিদা আর কৃষকের লাভের বিষয় বিবেচনা করে আমরা বাজারে এসব পিয়াজ আনছি।

এদিন কাওরান বাজারের পাইকারি বাজারে পাতাসহ পিয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। হাত বদলে এসব পিয়াজ (খুচরা) বিক্রি হচ্ছে ৬০০ বা ৭০০ টাকা পাল্লা।
কাওরান বাজারের গাউসিয়া ভাণ্ডারের (আড়ত) স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন, গত তিন-চার দিন ধরে পাতাসহ (অপরিপক্ক) পিয়াজ বাজারে আসছে। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন আরো বেশি আসছে। এর প্রভাবে চাহিদা কমেছে অন্য পিয়াজের, দামও কমেছে সবগুলোর। এভাবে পিয়াজ এলে দুই-তিনদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে পিয়াজ বাজার।
এদিকে পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরায় এখনো ২০০ টাকার বেশি দরে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, তারা বেশি দরে পিয়াজ কিনেছেন। পাইকারিতে দাম কমায় খুচরায়ও এক-দুদিনের মধ্যে দাম কমবে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশী পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা। আমদানি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা। নতুন পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা।

খুচরা পিয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, আগের বেশি দামে কেনা। ২১০ টাকায় কিনে ২১০ টাকায় বিক্রি করছি। ভাড়া পরিবহনসহ অনেক খরচ আছে। কি করা, এখন দাম কমে গেছে তাই লসে বিক্রি করতে হচ্ছে। শুনছি, পাইকারি বাজারে দাম কমেছে। আমরা ওই জায়গা (পাইকারিবাজার) থেকে কিনি। পাইকারি বাজারে কমলে খুচরা বাজারেও দাম কমে যাবে।
পাবনার ফড়িয়া পিয়াজের ব্যবসায়ী বেলাল জানান, মুড়িকাটা পিয়াজ বাজারে ওঠায় বড় আড়তদাররা পিয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে। এক দিন আগে আড়তে পিয়াজ কিনেছি পুরান ৫ হাজার ৯০০ টাকা মণ। আর নতুন পিয়াজ ৪ হাজার টাকা। নতুন পিয়াজের দাম ১০০ টাকা। আর পুরান পিয়াজ দেড়শ টাকা পড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সংকটকে পুঁজি করে কিছু কারসাজিকারী পিয়াজের বাজার অস্থির করে তোলে। অধিদপ্তরের অভিযানে তার প্রমাণ মিলেছে। অনৈতিকভাবে দাম বাড়ানোর অপরাধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। একই সঙ্গে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিনিধি বলেন, গতকাল মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পিয়াজ কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক দিন আগে রোববার বিকালে তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ হিসাবে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা কমেছে। মিয়ানমার ছাড়াও তুরস্ক, চীন ও মিসরের পিয়াজ কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রোববার এসব দেশের পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৬০-১৭০ টাকায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status