এক্সক্লুসিভ

বিরল রোগে আক্রান্ত কিশোরগঞ্জের তাসলিমা

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৯ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন

বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন তাসলিমা আক্তার (২৩) নামে কিশোরগঞ্জের এক নারী। এই রোগের কারণে স্বামী ছেড়ে গেছে তাকে, ভেঙে গেছে দশ বছরের সংসার। রিয়ামণি নামের নয় বছরের একমাত্র কন্যা-সন্তানকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তার। ফলে অর্থাভাবে থমকে আছে তাসলিমার চিকিৎসা। আট-নয় বছর বয়সে ডান হাতের রগ নীল হয়ে যায় তাসলিমার। ধীরে ধীরে হাতে গুটি ছড়িয়ে পড়ে। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক হাতটি কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাবা নূরুল ইসলাম তাতে রাজি হননি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে তাসলিমার সমস্যাটি। ডান হাতের আঙ্গুল থেকে কাঁধ পর্যন্ত অসংখ্য গুটি হয়ে ফোলে বিশালাকৃতির রূপ নিয়েছে। এরপরও বাড়ছে সমস্যাটি। ফলে ডান হাতটি বাম হাতের চেয়ে কয়েকগুণ ভারি হয়ে পড়েছে। রাতে প্রচুর ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারেন না। ভারি লাগায় হাত তুলতেও কষ্ট হয় তাসলিমার।
বিরল রোগে আক্রান্ত তাসলিমা আক্তারের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের স্বল্পমারিয়া গ্রামে। দশ বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা গ্রামের রাজমিস্ত্রী সোহাগ মিয়ার সাথে। কিন্তু বিরল রোগে আক্রান্ত তাসলিমার রোগ সারার কোন লক্ষণ না থাকায় এক পর্যায়ে স্বামী সোহাগ ছেড়ে যায় তাসলিমাকে। একমাত্র কন্যা সন্তান রিয়ামণি স্বল্পমারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী এবং কন্যা এখন আর কোন খোঁজখবর নেয় না সোহাগ।
তাসলিমার বাবা নূরুল ইসলাম আগে রিকশা চালাতেন। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাওয়ায় মাস ছয়েক যাবত তিনি বাড়িতেই পড়ে রয়েছেন। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র ভাই আরমান (২৭)ও বছর তিনেক আগে দুর্ঘটনায় আহত হলে তার ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেটের দায়ে ভাঙ্গা পা নিয়েই কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে আরমান স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করেন। ফলে নূরুল ইসলামের সংসারে কেবল অভাব আর হাহাকার। এ রকম পরিস্থিতিতে বাবার সংসারে বোঝা হয়ে রয়েছেন মা তাসলিমা ও মেয়ে রিয়ামণি। দু’বেলা আহারের জন্য এখন তাসলিমা হাত পাতেন মানুষের কাছে। তাই টাকার অভাবে চিকিৎসাও আটকে আছে তাসলিমার। এক বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একমাস চিকিৎসা নেয়ার পর তারা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তাসলিমাকে রেফার্ড করেন। হাতের ব্যথা যখন অসহনীয় ঠেকে, তখন মানুষের কাছে হাত পেতে জমানো কিছু টাকায় মাঝে মাঝে ঢাকায় গিয়ে ইনজেকশন নিয়ে আসেন।
তাসলিমা জানান, এভাবে আর তিনি পারছেন না। নির্মম বাস্তবতার কাছে তিনি বড় অসহায়। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই যেন নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন তাসলিমা। কিন্তু একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকালে খুব বাঁচতে ইচ্ছে হয় তার। এজন্যে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এই দুঃসহ জীবন-যন্ত্রণা তাকে রক্ষা করবেন। তার সুচিকিৎসার জন্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। তাকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তাসলিমার বিকাশ নম্বরে (০১৮৬৬-৭৯২৪০১) আর্থিক সহায়তা পাঠানো যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status