বিশ্বজমিন

সিগারেট ছেড়ে ই-সিগারেট: ধূমপায়ীদের হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়ায় ব্যাপক উন্নতি

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

সাধারণ তামাক পাতার সিগারেট ছেড়ে ই-সিগারেট ব্যবহার করেন এমন দীর্ঘদিনের ধূমপায়ীদের ওপর একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, মাত্র এক মাসের মধ্যেই ওই ধূমপায়ীর হৃৎযন্ত্রের পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। বৃটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তামাক পাতার সিগারেট ছেড়ে যারা নিকোটিন-সমৃদ্ধ ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন, তাদের হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়ায় উন্নতি দেখা গেছে। অর্থাৎ, এই পরিবর্তনের কারণে তাদের হৃৎরোগের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃটিশ বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফলাফল অবশ্য বিশ্বব্যাপী বহু স্বাস্থ্য গবেষক খুবই গভীরভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করবেন।

তবে বৃটেনের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন ও থেরাপিউটিকস বিভাগের অধ্যাপক জ্যাকব জর্জ বলেন, ‘সিগারেট ছেড়ে যারা ই-সিগারেট ধরেছেন, তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তাদের হৃৎযন্ত্রের কার্যক্রমে মাত্র এক মাসেই গড়ে ১.৫% উন্নতি হয়েছে। একে যদি প্রেক্ষিতের মধ্যে দাঁড় করাই, তাহলে বলতে হয় যে, সংবহনতান্ত্রির ক্রিয়ায় যদি ১ শতাংশও উন্নতি হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃৎযন্ত্র সংক্রান্ত দুর্ঘটনার হার ১৩ শতাংশ হ্রাস পায়।’

জ্যাকব অবশ্য একটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই গবেষণায় বিশেষভাবে ই-সিগারেট গ্রহণ বা ভেপিং-কে তামাক পাতার সিগারেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তামাক পাতার সিগারেট গ্রহণে ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়া প্রাণঘাতি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও হৃৎযন্ত্রের অন্যান্য জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

তবে জ্যাকব বলেন, ‘এ বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, ই-সিগারেট মোটেই নিরাপদ নয়। সংবহনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে তামাক পাতার সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট কিছুটা কম ক্ষতিকর। ই-সিগারেটকে মোটেই ক্ষতিহীন যন্ত্র হিসেবে দেখা উচিৎ নয়। ফলে যারা ধুমপান করেন না বা তরুণ, তারা একে ক্ষতিহীন কিছু ভেবে গ্রহণ করবেন না।’
জ্যাকব ও তার দলের এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলোজিতে। খবরে বলা হয়, এই গবেষণার কারণে ই-সিগারেটের সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্ক আরও বাড়বে। সাম্প্রতিক বছরে শুধু ই-সিগারেট সংক্রান্ত ২,০০০ ফুসফুস রোগ ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া ৪০ জনের মৃত্যুর জন্য ই-সিগারেট গ্রহণকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাদের গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, ই-সিগারেটে টিএইচসি থাকে। এই টিএইচি হলো গাজার একটি উপাদান যা গ্রহণকারীকে মাতাল করে। এছাড়া থাকে জারিত ভিটামিন ই। এই দুইটি উপাদানের কারণেই ওই রোগ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বৃটেনের নেশা ও বিষবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা গত মাসে অবশ্য বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ভেপিং সংক্রান্ত যে অসুস্থতার খবর পাওয়া গেছে, তা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক সমস্যা। এ ধরণের কোনো সমস্যা বৃটেনে বা অন্য কোনো দেশে দেখা যায়নি।
ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পরীক্ষামূলক গবেষণা চলেছে দুই বছর ধরে। এতে অর্থায়ন করেছে বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য সংস্থা। এতে দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করে আসছেন এমন ১১৪ জন ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। এই ব্যক্তিরা গত দুই বছরে দিনে কমপক্ষে ১৫টি সিগারেট গ্রহণ করতেন। তাদেরকে এক মাসের জন্য তিনটি দলে ভাগ করা হয়। এক মাস আগে ও পরে তাদের সংবহনতন্ত্রের পরীক্ষা নেওয়া হয়। তিন দলের মধ্যে একটি দল আগের মতোই তামাক পাতার সিগারেট গ্রহণ করে। দ্বিতীয় দল নিকোটিনের ই-সিগারেট গ্রহণ করতে শুরু করে। তৃতীয় দল নিকোটিন বিহীন ই-সিগারেট নিতে থাকেন। পরে ফলাফল থেকে দেখা গেছে, ই-সিগারেট গ্রহণকারী দু’টি দলের শরীরে রক্ত প্রবাহের ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status