এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে ফেলে দেয়া পচা পিয়াজ বিক্রি

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৮ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে এবার ফেলে দেয়া পচা পিয়াজ বিক্রি চলছে। খাল-নদী ও ময়লার ভাগাড় থেকে কুড়িয়ে রোদে শুকিয়ে এসব পিয়াজ বিক্রয় করছে খেটে খাওয়া মানুষ। যা খেলে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও লিভার বিশেষজ্ঞ আবদুল কাদের বলেন, পিয়াজে ভিটামিন সি, বি পটাসিয়াম, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। পিয়াজে এলার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের ত্বক ও চোখের লালচে ভাব, চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, মুখের ফোলাভাবসহ রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

তবে পিয়াজের অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর। অন্ত্রের গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, ফ্রুকটোজের সমস্যাসহ অতিরিক্ত পিয়াজ গর্ভবতী নারীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। পচা পিয়াজে ব্যাপকহারে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয়। এতে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, পচা পিয়াজ কর্ণফুলীতে নিক্ষেপের ফলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে। এ পরিস্থিতি যেকোন প্রাণীকূল ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড়, কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালে প্রচুর পরিমাণে পচা পিয়াজ ফেলে দেয়া হয়। সেখান থেকে একশ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষ ও টোকাইরা সাধ্যমত কুড়িয়ে নিয়ে যায় পিয়াজ। অবশ্যই এসব পিয়াজ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে সরিয়ে নেয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক আহমদ ছফা জানান, খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড় থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ১৬ টন পচা পিয়াজ বায়েজিদ এলাকার আরেফিন নগর ময়লার ভাগাড়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ফাঁকে ৪-৫ টনেরও বেশি পিয়াজ বেছে বেছে নিয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এছাড়া হামিদুল্লাহ মার্কেটে, সামনের রাস্তায়, চান মিয়া বাজার ও মধ্যম চাক্তাই এলাকায় পচা পিয়াজ পেয়েছি। সেখান থেকে চার ট্রাক সরিয়ে নিতে পেরেছি। সেখান থেকেও বেশ কিছু পিয়াজ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। এছাড়া চাক্তাই খালের পানি থেকেও পিয়াজ কুড়িয়ে নেয়া হয়েছে। যেগুলো তারা রোদে শুকাতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ময়লার ভাগাড়, খাল ও নদী থেকে কুড়ানো পিয়াজ শুকিয়ে তুলনামূলক ভালো পিয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। অনেকে ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রির জন্য নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও অলিগলিতে নিয়ে গেছে।

নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ভ্যানে করে পচা পিয়াজ বিক্রয় করছিলেন আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, অতি মুনাফার লোভে গুদামজাত করা পিয়াজ পচে গেছে। ফেলে দেয়া পিয়াজ থেকে বেছে বেছে ভালোগুলো বিক্রি করছি অনেক কম দামে। তিনি বলেন, আড়তের ভালো পিয়াজ এখন কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। সে হিসেবে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি কুড়িয়ে আনা পিয়াজ। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন বলে জানান তিনি। পিয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী কামরুন নাহার বলেন, পিয়াজের যে দাম বাজারে। তার চেয়ে ভ্যান গাড়ীতে একটু কম আছে। পিয়াজগুলো একটু পচা এই আর কি। পচা আর ভালো পিয়াজ দিয়ে কি হবে, খেতে পারলেই তো হলো! খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সমপাদক মো. ইদ্রিচ জানান, যেসব পিয়াজ ময়লার ভাগাড় ও নদীতে ফেলে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা সেগুলো মিয়ানমারের পিয়াজ। আনার সময় নৌকার তলায় পানি লেগে সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা অন্তত ২০টন পচা পিয়াজ ফেলে দিয়েছে। যেগুলোতে অন্তত ২৭-২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পচা পিয়াজের ক্ষতি পোষাতে ভালো পিয়াজগুলো কেনা খরচের চেয়েও অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের বাজারে এখন যেসব পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে সবগুলো মিয়ানমারের। শুক্র ও শনিবার মিয়ানমার থেকে ৩৫৬ টনসহ ৫৭০ টন পিয়াজ খাতুনগঞ্জে এসেছে। তবে মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের অধিকাংশ পচা। প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ বস্তা করে পিয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত আকস্মিকভাবে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে পিয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পাইকারিতে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার পিয়াজ দিনশেষে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি হতে শুরু করে। আর খুচরা বাজারে সেটা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার, আমদানিকারকের আড়তে অভিযান শুরু করে। পিয়াজ ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করে প্রশাসন। প্রতিবার অভিযানের পর পিয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও এক-দুদিন পরই তা আবারো বেড়ে যায়। এ অবস্থায় হাল ছেড়ে দিয়েছে প্রশাসনও। বর্তমানে এ পিয়াজ যেন গলার কাঁটা।

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status