অনলাইন

আক্রমনাত্মক ভিডিও গেমস আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য দায়ী?

শাহরিয়ার মোস্তফা রোমিও

১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

পাব্জি, কল অফ ডিউটি, ব্যাটেল ফিল্ড কিংবা জিটিএ এরকম রয়েছে জনপ্রিয় অনেক গেমস। সাধারনত অনেকে এগুলোকে দোষারোপ করে বিভিন্ন কারনে, টিনেজার দের মাঝে আক্রমনাত্মক মনোভাব কিংবা কোন আগ্নেয়াস্ত্র ধারীর কৃতকর্মের জন্য মাঝেমধ্যে দায়ী করা হয় এইসব ভিডিও গেমস কে। কিন্তু আসলেই কি ভিডিও গেমস এসব কারণের জন্য দায়ী।

আসলে না, সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় ভুল প্রমানিত হচ্ছে এরকম ধরনের দোষারোপকে। ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এবং কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষণাকারী, অ্যান্ড্রু সিবলস্কি এবং নেটা ওয়েইনস্টেইন রয়েল রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে উঠে আসে যে, পূর্বের সকল গবেষণা অমীমাংসিত কারন সেগুলো করার সময় একটি অতি গুরুত্তপূর্ণ বিষয় বাদ দেয়া হয়েছিল আর তা ছিল তাদের বাবা-মায়ের অভিমত। কিন্তু এবার তারা গবেষনাটি তে এই বিষয়টি খেয়াল রেখেছে সার্ভে করেছে এক হাজার জন চৌদ্দ থেকে পনের বছরের বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়ে এবং তাদের অভিভাবকদের উপর। তাদেরকে করা হয়েছে ভিডিও গেমস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন, বিভিন্ন রিগ্রেশন এনালাইসিস করে প্রশ্নের সার্ভের উপর এবং পরবর্তীতে তারা উপনীত হয়েছে যে, আক্রমনাত্মক ভিডিও গেমস টিনএজদের মাঝে আক্রমণাত্মক মনোভাব বৃদ্ধি করে না। কিন্তু, এখনো আক্রমনাত্মক ভিডিও গেমস খেলা এবং অসামাজিক আচরণের মধ্যে যোগসূত্র, যেমন আগ্রাসন বৃদ্ধির সাথে একই হারে সহানুভূতি হ্রাস করার বিষয়টা আসলে এখনো তীব্রভাবে বিতর্কিত। লাস ভেগাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া বিভাগের অধ্যাপক বেনজামিন বুড়োস বলেছেন, কিছু কিছু গবেষণায় ভিডিও গেমস খেলার পরে আক্রমণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলির মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদী বৃদ্ধি দেখায়, তবে তা সহিংসতার স্তরে উঠে আসে এমন কিছুই নয়। ২০১৭ সালে জার্মানিতে গবেষকরাফাংশনিং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করেছেন সহিংস ভিডিও গেমসের খেলোয়াড়দের এবং যারা এগুলো খেলে না তাদের উপরে, তাদেরকে সংবেদনশীল উস্কানিমূলক চিত্রগুলো দেখানোর পর ও সকলেরই স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়া একই ছিল।

এই অনুসন্ধানটি দ্বারা বোঝা যায় যে দীর্ঘ সময় ধরে এই জাতীয় গেমস খেললে সহানুভূতি হ্রাস পায় না। তবে কেন এখনো এই ভিডিও গেমস বিষয়টি এতো বিতর্কিত, কিছুদিন পরপরই এরকম হুট করে চলে আসে যে ভিডিও গেমস ছড়াচ্ছে আগ্রাসী মনোভাব। অনেকে বিষয়টাকে দেখছেন রাজনৈতিকভাবে। ভিডিও গেমস নিয়ে অধ্যায়নরত ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিক মার্কি বলেন, উভয় পক্ষের রাজনীতিবিদরা ভিডিও গেমগুলোকে দোষারোপ করেন কারন শুনতে অদ্ভুত হলেও এটি একতাবদ্ধ করার একটি মনোভাবের মাঝে রাখে। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন(এপিএ) কর্তৃক সাইকোলজি অফ পপুলার মিডিয়া কালচার জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ কেউ স্কুলে গোলাগুলি করলে সাধারনত ভিডিও গেমসেকে দোষারোপ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা আফ্রিকান আমেরিকান কেউ যদি তা করে থাকে তার তুলনায় ।

এবং তা থেকেই বোঝা যায় সংখ্যালঘু কেও এই কাজ করলে এখানে উঠে আসবে বর্ণবাদী মনোভাব। তিনি আরো জানান, অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহিংস ভিডিও গেমস এবং ম্যাস শুটিং এর মধ্যে কোনও যোগসূত্র পাওয়া যায় নি, তবে কিছু রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া কভারেজ প্রায়শই ভিডিও গেমসকে বিশেষত স্কুল শ্যুটিংয়ের জন্য এটিকে সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উল্লেখ করে। ভিডিও গেমগুলি প্রায়শই তরুণদের সাথে সম্পর্কিত হয় যদিও খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৩০ এর দশকের। ভার্জিনিয়ার টেক এর প্রফেসর এবং রিসার্চ ডিরেক্টর জেমস আইভরি মনে করেন, অপরাধমূলক সহিংস কর্মকান্ড গুলোর ঘটনার সাথে ভিডিও গেমস কে দায়ী করার কারন নেই। এসকল কর্মকাণ্ডের সাথে জড়ানোর জন্য অনেক কিছুই ইস্টিমুলাস হিসেবে কাজ করতে পারে শুধু ভিডিও গেমস কে দায়ী করাটা খুব সহজ। তাই অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলার থেকে। তাই ভিডিও গেমসকে সাধারণত দোষারোপ করে থাকে সকলে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status