বিশ্বজমিন
গাম্বিয়া কেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেল?
মানবজমিন ডেস্ক
১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ছোট্ট দেশ এ সপ্তাহে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে সাধারণত দুই দেশের মধ্য বিদ্যমান কোনো বিবাদ নিরসনের কাজ করে থাকে। এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলা অনেক ভ্রুকুটির জন্ম দিয়েছে। কেননা, মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে গাম্বিয়ার কোনো ধরণের দৃশ্যমান যোগসূত্রও নেই।
তাহলে কেনো এত দূরের একটি সংঘাতের বিচার নিশ্চিতের জন্য আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশটি উদ্যোগী হলো? ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি গাম্বিয়ার জন্য একেবারেই নিজস্ব। গত বছর গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবাকার এম টাম্বাদু জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন পড়েন। সেই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে ও ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। তদন্তকারীরা এই সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমার অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে যে, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছিল।
গাম্বিয়ার এই আইনমন্ত্রী তাম্বাদু কয়েক বছর জাতিসংঘের একটি ট্রাইবুনালে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। এই ট্রাইবুনালে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচার চলছিল। তাম্বাদু ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফর করেন। শরণার্থীদের সঙ্গে তার আলাপচারিতার সময় তাদের বেদনার স্মৃতিচারণ তাম্বাদুকে রুয়ান্ডার সরকারের নেতৃত্বে সংঘটিত সেই গণহত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই গণহত্যায় মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। আনুমানিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
এক ফোন সাক্ষাৎকারে তাম্বাদু বলেন, ‘আমি যখন রোহিঙ্গাদের মুখে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নৃশংস সব কাহিনী শুনছিলাম, আমার তখন রুয়ান্ডান গণহত্যার কথা মনে পড়ে গেলো। ১৯৯৪ সালে বিশ্ব কিছু করতে পারেনি। ২৫ বছর বাদে আজও ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ব।’
সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। দেশটির প্রত্যাশা এর ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি চাপ তৈরি হবে।
এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলিরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। আইসিসি অবশ্য যুদ্ধাপরাধ নিয়েই বেশি কাজ করে। তবে মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কোনো জুরিসডিকশন নেই আইসিসি’র। কেননা, মিয়ানমার এই আদালতের সদস্যরাষ্ট্র নয়। তাই আইসিসি’র প্রচেষ্টা বেশিদূর আগাতে পারেনি।
কিন্তু আইসিজে’র ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রবিধি মোতাবেক কোনো বিবাদের ক্ষেত্রে আইসিজে রায় দিতে পারে। এই প্রবিধিতে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়ই স্বাক্ষর করেছে।
তবে এ ধরণের আইনি তৎপরতা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। খরচ হয় কয়েক মিলিয়ন ডলার। গাম্বিয়ার মতো ছোট্ট দেশের ক্ষেত্রে এই বিপুল অর্থ খরচ করাটা কঠিন। দেশটির অর্থনীতির আকার মাত্র ১৪৮ কোটি ডলার।
তবে গাম্বিয়ার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে অন্যান্য দেশ। ২০ লাখ জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়াকে সহায়তা দেবে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন আইসিসি। এছাড়া সহায়তা দেবে মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান ফোলে হোগ।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক জন প্যাকার দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, গাম্বিয়ার করা এই মামলার ফলাফল যা-ই হোক না কেন, এর ফলে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে বিশ্বের নজর ফের ফিরলো। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা এমন জিনিস যাকে সবাই নিজের ওপর আঘাত মনে করে। এর ফলে যেকোনো রাষ্ট্রই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে। পুরো বিশ্বের পক্ষে যেন লড়ছে ছোট্ট গাম্বিয়া।’
অন্যান্য অনেক দেশই গাম্বিয়ার প্রশংসা করেছে। কারণ, দেশটি এমন সময় এগিয়ে এলো যখন অন্য দেশগুলো ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে চায় বেশি। আবার কেউ কেউ নিজের ইস্যু নিয়েই ভারাক্রান্ত। কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গণহত্যার দায় নিশ্চিত করণে এই পদক্ষেপ সহায়ক হবে।
তবে গাম্বিয়ার নিজেরও আছে এক সহিংস অতীত। ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী ইকুয়েটোরিয়াল গায়ানায় পালিয়ে যাওয়ার আগে ২২ বছর দেশটি শাসন করেছেন ইয়াহহিয়া জাম্মে। এই একনায়কের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারও শুরু হয়েছে দেশটিতে। ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে জাম্মের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাম্বাদু বলেন, ‘এই মামলা করার পেছনে যেসব ফ্যাক্টর কাজ করেছে, তার একটি হলো আমাদের নিজস্ব অতীত অভিজ্ঞতা। সঠিক সময়ে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করতো ও সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করতো, আমি মনে করি না যে দুই দশক ধরে আমাদের এই নির্মম নৃশংসতা সহ্য করতে হতো।’
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে সাধারণত দুই দেশের মধ্য বিদ্যমান কোনো বিবাদ নিরসনের কাজ করে থাকে। এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলা অনেক ভ্রুকুটির জন্ম দিয়েছে। কেননা, মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে গাম্বিয়ার কোনো ধরণের দৃশ্যমান যোগসূত্রও নেই।
তাহলে কেনো এত দূরের একটি সংঘাতের বিচার নিশ্চিতের জন্য আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশটি উদ্যোগী হলো? ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি গাম্বিয়ার জন্য একেবারেই নিজস্ব। গত বছর গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবাকার এম টাম্বাদু জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন পড়েন। সেই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে ও ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। তদন্তকারীরা এই সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমার অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে যে, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছিল।
গাম্বিয়ার এই আইনমন্ত্রী তাম্বাদু কয়েক বছর জাতিসংঘের একটি ট্রাইবুনালে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। এই ট্রাইবুনালে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচার চলছিল। তাম্বাদু ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফর করেন। শরণার্থীদের সঙ্গে তার আলাপচারিতার সময় তাদের বেদনার স্মৃতিচারণ তাম্বাদুকে রুয়ান্ডার সরকারের নেতৃত্বে সংঘটিত সেই গণহত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই গণহত্যায় মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। আনুমানিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
এক ফোন সাক্ষাৎকারে তাম্বাদু বলেন, ‘আমি যখন রোহিঙ্গাদের মুখে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নৃশংস সব কাহিনী শুনছিলাম, আমার তখন রুয়ান্ডান গণহত্যার কথা মনে পড়ে গেলো। ১৯৯৪ সালে বিশ্ব কিছু করতে পারেনি। ২৫ বছর বাদে আজও ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ব।’
সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। দেশটির প্রত্যাশা এর ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি চাপ তৈরি হবে।
এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলিরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। আইসিসি অবশ্য যুদ্ধাপরাধ নিয়েই বেশি কাজ করে। তবে মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কোনো জুরিসডিকশন নেই আইসিসি’র। কেননা, মিয়ানমার এই আদালতের সদস্যরাষ্ট্র নয়। তাই আইসিসি’র প্রচেষ্টা বেশিদূর আগাতে পারেনি।
কিন্তু আইসিজে’র ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রবিধি মোতাবেক কোনো বিবাদের ক্ষেত্রে আইসিজে রায় দিতে পারে। এই প্রবিধিতে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়ই স্বাক্ষর করেছে।
তবে এ ধরণের আইনি তৎপরতা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। খরচ হয় কয়েক মিলিয়ন ডলার। গাম্বিয়ার মতো ছোট্ট দেশের ক্ষেত্রে এই বিপুল অর্থ খরচ করাটা কঠিন। দেশটির অর্থনীতির আকার মাত্র ১৪৮ কোটি ডলার।
তবে গাম্বিয়ার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে অন্যান্য দেশ। ২০ লাখ জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়াকে সহায়তা দেবে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন আইসিসি। এছাড়া সহায়তা দেবে মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান ফোলে হোগ।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক জন প্যাকার দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, গাম্বিয়ার করা এই মামলার ফলাফল যা-ই হোক না কেন, এর ফলে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে বিশ্বের নজর ফের ফিরলো। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা এমন জিনিস যাকে সবাই নিজের ওপর আঘাত মনে করে। এর ফলে যেকোনো রাষ্ট্রই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে। পুরো বিশ্বের পক্ষে যেন লড়ছে ছোট্ট গাম্বিয়া।’
অন্যান্য অনেক দেশই গাম্বিয়ার প্রশংসা করেছে। কারণ, দেশটি এমন সময় এগিয়ে এলো যখন অন্য দেশগুলো ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে চায় বেশি। আবার কেউ কেউ নিজের ইস্যু নিয়েই ভারাক্রান্ত। কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গণহত্যার দায় নিশ্চিত করণে এই পদক্ষেপ সহায়ক হবে।
তবে গাম্বিয়ার নিজেরও আছে এক সহিংস অতীত। ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী ইকুয়েটোরিয়াল গায়ানায় পালিয়ে যাওয়ার আগে ২২ বছর দেশটি শাসন করেছেন ইয়াহহিয়া জাম্মে। এই একনায়কের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারও শুরু হয়েছে দেশটিতে। ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে জাম্মের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাম্বাদু বলেন, ‘এই মামলা করার পেছনে যেসব ফ্যাক্টর কাজ করেছে, তার একটি হলো আমাদের নিজস্ব অতীত অভিজ্ঞতা। সঠিক সময়ে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করতো ও সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করতো, আমি মনে করি না যে দুই দশক ধরে আমাদের এই নির্মম নৃশংসতা সহ্য করতে হতো।’