দেশ বিদেশ

চেহারা পাল্টায়নি সিলেট রেলের

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

চেহারা পাল্টায়নি সিলেটে ট্রেনের। লক্কড়ঝক্কর বগি ও পুরাতন আমলের ঝুঁকিপূর্ণ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা ট্রেনজার্নি করছেন। আর এতে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে সিলেটের রেলপথ। বার বার সরকারের মন্ত্রী কিংবা উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো সুখবর মিলেনি। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে সিলেটে। আতঙ্কময় রেলপথে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন সিলেটের মানুষ। বরমচালের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও ওই ঘটনার পর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মাসখানেক আগেও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সিলেটের ট্রেন নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই সিলেটবাসীর। শতাধিক বছর আগে রেললাইন সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। অর্ধশতাধিকের উপর সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক মাস আগে কুলাউড়ার বরমচালে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতেই ঘটেছিল দুর্ঘটনা। বরমচালের মতো কম হলেও ২০টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত। আর বৃটিশ আমলের লাইন হওয়ার কারণে অনেক স্থানই হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সিলেট রুটের ট্রেনেরও মান ভালো নয়। সব পুরাতন বগি ও ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হচ্ছে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রোডের ট্রেন। গত দেড় দশক ধরে পথ ও বগি নিয়ে সিলেটবাসীর ক্ষোভের অন্ত নেই। এই অবস্থায় কয়েক বছর আগে চীনের সঙ্গে ২৫টি চুক্তির মধ্যে সিলেট-ঢাকা রেলপথকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর থেকে সিলেটের রেলপথের উন্নয়ন নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছেন সিলেটের মানুষ। তবে এখনো আশাবাদী সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি সিলেট সফরকালে একাধিকবার জানিয়েছেন রেলপথের উন্নয়নের কথা। একই সঙ্গে নতুন বগি সংযোজনেরও কথা বলেছেন তিনি। তার আশ্বাস মতো আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি মাসে কোনো প্রকল্প আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সিলেটের যোগাযোগের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী তিনি সড়ক, আকাশ ও রেলপথ নিরাপদ করতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সিলেটে ব্যবসায়ী নেতারা। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবুল তাহের মো. শোয়েব গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘সিলেটের রেল এবং পথ নিয়ে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে মাসখানেক আগে একটি প্রস্তাবনা রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইন করা। নতুন বগি ও ইঞ্জিন সংযোজন করা। ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একাত্ম রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট-আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন শতাধিক বছরের পুরনো। এই লাইনে যাত্রীরা মৃত্যুভয়ে থাকেন। পাশাপাশি নিম্নমানের বগি ও ইঞ্জিন থাকায় ট্রেনজার্নি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ না নিলে ট্রেনপথে মৃত্যুর মিছিল থামবে না বলে জানান তিনি।’ সিলেট বিভাগ গণদাবি ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, বরমচালের ঘটনার পর তারা একাধিকবার রেল মন্ত্রণালয়সহ নানা দপ্তরে রেলপথ সংস্কার, ডাবল লাইন করাসহ নানা দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এসব দাবির  কোনো সুফল পাচ্ছেন না। অপরদিকে, ট্রেনপথে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। এ কারণে সিলেটবাসীর মনে ক্ষোভও বিরাজ করছে। ট্রেনপথে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণে এখন যাত্রীও কমে আসছে। সিলেট বিভাগ গণদাবি ফোরামের সভাপতি এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ জানিয়েছেন, সিলেটের রেলপথ এখন আইসিইউতে আছে। এ কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। আর পুরাতন বগি ও ইঞ্জিনের কারণে কোথাও কোথাও ট্রেন লোড সামলাতে পারে না। বেশি যাত্রী হলে ট্রেন প্রেসার নিতে পারে না। সুতরাং বুঝতেই হবে ট্রেনের অবস্থা। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সিলেট থেকে আখাউড়া ডাবল ব্রডগেজ লাইন প্রয়োজন। পাশাপাশি নতুন বগি ও ইঞ্জিন সংযোজন করতে হবে। নতুবা দিন দিন মৃত্যুর ভয়ে সিলেটের মানুষ ট্রেনপথে জার্নি পরিহার করবে। গতকালের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ট্রেনের আঘাতে ধুমড়ে মুচড়ে গেছে উপবন ট্রেন। কিন্তু আঘাতকারী তূর্ণা-নিশীথা ট্রেনের তেমন ক্ষতি হয়নি। এ থেকে বোঝা যায় কোন মানের ট্রেন চলছে সিলেট রুটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status