প্রথম পাতা

বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান থেকে

বাংলাদেশ নয় মালদ্বীপে পিয়াজ পাঠাচ্ছে ভারত

স্টাফ রিপোর্টার

১২ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি না করলেও মালদ্বীপকে অব্যাহতভাবে পিয়াজ সরবরাহ করে যাবে ভারত। নিজেদের দেশে পিয়াজের সংকট থাকা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। রোববার  মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এক টুইটে পিয়াজ রপ্তানির কথা নিশ্চিত করেছে। বলেছে, নিজের দেশে মারাত্মক সংকট এবং মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করছে ভারত। তা সত্ত্বেও মালদ্বীপকে পিয়াজ দেয়া অব্যাহত রাখা হবে। কেবল পিয়াজ নয়, মালদ্বীপে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য রপ্তানিই অব্যাহত রাখবে ভারত। উল্লেখ্য, দেশে চলমান সংকট সামাল দিতে আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক ও মিসর থেকে পিয়াজ আমদানি করছে ভারত।
ভারতের খাদ্যমন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান রোববার জানিয়েছেন, দেশে চলমান ঘাটতি সামাল দিতে ১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতিও। উল্লেখ্য, ভারতে পিয়াজের মূল্য রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার পরিমাপক হিসেবে বিবেচিত। এজন্য সরকারের পতনও হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের জন্য জনসম্মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। ভারত থেকে পিয়াজ না আসায় বাংলাদেশকেও অন্যান্য দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। শেখ হাসিনা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে রসিকতা করে বলেছিলেন, একটা সমস্যা আছে। আপনারা পিয়াজ পাঠাচ্ছেন না, তাই আমি পিয়াজ ছাড়াই (খাবার) খাচ্ছি।
পাকিস্তান থেকে ৩০০ টন পিয়াজ আসছে বাংলাদেশে: এবার পাকিস্তান থেকে পিয়াজ আসছে। ৩০০ টন পিয়াজ আমদানির এলসি ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে। তা চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়বে কেজি প্রতি ৫৫-৫৭ টাকা। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবর, কমপক্ষে ১৫ বছর পর বাংলাদেশের কাছ থেকে পিয়াজ রপ্তানির আদেশ পেয়েছে  পাকিস্তান। করাচি ভিত্তিক রোশান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে ঢাকার তাসো এন্টারপ্রাইজের মধ্যে ৩০০ টন পিয়াজ রপ্তানির চুক্তি হয়েছে সমপ্রতি। ট্রেড ভেলপমেন্ট অথোরিটি অব পাকিস্তানের (টিডিএপি) এক কর্মকর্তা খবরটি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। ওই কর্মকর্তা বলেন, অর্ডার মতে প্রতি কন্টেইনারে ২৮ টন করে কমপক্ষে ১২ কনটেইনার পিয়াজ বাংলাদেশে যাবে। পরবর্তীতে আরও রপ্তানি আদেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবারও বাড়লো পিয়াজের দাম: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পিয়াজের বাজারে প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক দিনে বাজারে দাম কিছুটা কমলেও গত দুই দিন ধরে আবার বাড়ছে দাম। গতকাল বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, পিয়াজের সঙ্কট কাটাতে এবার পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কিছু পিয়াজ আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক দিন পিয়াজ আমদানি বন্ধ ছিলো। তাই সরবরাহ কমে যাওয়ায় পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়িয়েছেন। কারওয়ান বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বাজারে ভারতীয় পিয়াজও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশি পিয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মিসর ও চীন থেকে আমদানি হওয়া পিয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের আগে এই পিয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন ও তার সহকারী সেলিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পিয়াজ আমদানি বন্ধ ছিলো। তাই বাজারে পিয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন মিসর, তুরস্ক, চীন এবং পাকিস্তান থেকেও পিয়াজ আমদানি হচ্ছে। এতে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। তিনি জানান, মিসর থেকে আমদানিকৃত পিয়াজ পাইকারী দরে কেজিতে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পিয়াজ পাইকারী ১২০ টাকায় বিক্রি  হচ্ছে। পিয়াজের খুচরা বিক্রেতা জুয়েল জানান, আমরা মিসরীয় পিয়াজ ১১০ টাকা দরে কিনে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। এর বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। কারণ বাজারে এমনি সব ধরনের পিয়াজের দাম বেশি। এছাড়া বাজারে ক্রেতাও কম। দাম বাড়লেই যে আমাদের লাভ বেশি হবে তাতো নয়। কিন্তু অনেক ক্রেতা আমাদের সঙ্গে এমনভাবে দামাদামি করে যে, যেন আমরা পিয়াজের দাম বাড়িয়েছি। অথচ দাম বাড়লে আমাদেরও ব্যবসা করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পুঁজি বেশি লাগে কিন্তু লাভ বেশি হয় না। আমরাও চাই পিয়াজের দাম কমুক।
দেশি পিয়াজ বিক্রি করছেন সুমির। তার দোকানে টাঙ্গানো রয়েছে পিয়াজের মূল্য তালিকা। লেখা আছে দেশি পিয়াজ ১৩০ টাকা। দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান ১৪০ টাকা। তিনি বলেন, ১৩০ টাকা আগের মূল্য। এখন ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মামুন নামের একজন ক্রেতা বলেন, সুযোগ বুঝে বিভিন্ন অজুহাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়িয়েছে। শুধু এই ঘূর্ণিঝড় নয়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টিতে সরবরাহ কমার অজুহাতে তারা পণ্যের দাম বাড়ায়। তাদের কাছে আমরা অসহায়। সরকার চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। ইলিয়াস নামের আরও একজন ক্রেতা জানান, সুযোগ বুঝে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা শুধু পিয়াজের ক্রেত্রে নয়, আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, আড়তদার, কমিশন এজেন্ট, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কখনও সাধারণ ক্রেতাদের শান্তিতে থাকতে দেয় না। পবিত্র রোজার মাস, কোরবানির ঈদের সময়েও একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিয়মিতভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায়। পিয়াজের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status