প্রথম পাতা

এশিয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১০ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘদিন ধরে মন্দার কবলে পুঁজিবাজার। গত ৭ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমে গেছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে, এশিয়ার প্রধান পুঁজিবাজারগুলোর মধ্যে সব সূচকেই পিছিয়ে পড়ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় ডিএসই’র সূচকের পতন ঘটেছে প্রায় ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডিএসই’র প্রতিবেদন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা। তাতে ডিএসই’র বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকার তথ্য উঠে আসে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, মন্দা বাজার থেকে বের হয়ে আসতে হলে দরকার ভালো শেয়ারের জোগান। সেজন্য বহুজাতিক ও ভালো মানের কোম্পানির তালিকাভুক্তি জরুরি। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। ফলে এশিয়ায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। তবে ভালো মানের কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে দেশের পুঁজিবাজার অনেক এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের সংকট একদিনের নয়। অনেক দিন থেকে চলে আসছে। এখানে মূল সমস্যা হল এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। কারণ বিভিন্ন সময়ে যারা বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার হয়নি। ফলে আস্থা ফিরে আনতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের প্রধান পুঁজিবাজার স্টক এক্সচেঞ্জ অব থাইল্যান্ডের (এসইটি) সূচকের উত্থান ঘটেছে ০.৯৭ শতাংশ। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজার ইন্দোনেশিয়া স্টক এক্সচেঞ্জের (আইএসই) সূচকেরও উত্থান ঘটেছে ০.৩৮ শতাংশ। পাকিস্তানের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জের সূচক বেড়েছে ১.৮৮ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়ে ভারতের প্রধান পুঁজিবাজার এসঅ্যান্ডপি বিএসই সেনসেক্সের সূচকের পতন ঘটেছে ১.৩৪ শতাংশ। পাশাপাশি বাংলাদেশের ডিএসইএক্সের সূচকের পতন ঘটেছে ২.৯১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজার মূলধনের দিক দিয়ে এশিয়ার নির্বাচিত ৬টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল থাইল্যান্ড।

ডিএসই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৪ই মার্চ ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা কমে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। ৫০ টাকার শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ২ টাকায়। এর মধ্যে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছে, তারা পুঁজি হারানোর পরও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ঋণগ্রস্ত। শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগকারী নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরও রয়েছে এ সমস্যায়। আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আপাতত কোনো সুখবর নেই।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শেয়ারবাজারে দুষ্টচক্রের দুষ্ট কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারল্য সংকটের কারণে বাজারে সমস্যা। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কারণ মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। এছাড়া কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট স্বচ্ছ করার ওপর জোর দেন তিনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা গেছে, আলোচিত ১ মাসে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১১৩.৮১ শতাংশ। এর পরেই আছে ইন্দোনেশিয়া। এই দেশটির জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন ছিল ৪৬.৬১ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৫.৪৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সূচক সবচেয়ে কম, ১৩.০৬ শতাংশ।
এদিকে, গত সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারে লেনদেন করা ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের বার্ষিক হার ছিল ১.৪০ শতাংশ। ভারতে এই হার ৬.৬০ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ৭.২০ শতাংশ।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্রেজারি বন্ডের বার্ষিক সুদহার ৮.৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ আলোচিত দেশগুলোর মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের পেছনে সবচেয়ে বেশি সুদ ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। তবে এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ট্রেজারি বন্ডের বার্ষিক সুদহার ১৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, মূল্য আয় অনুপাতের (পিই রেশিও) দিক দিয়ে শ্রীলঙ্কার পর বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। সেপ্টেম্বরের শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৫। শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজারে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে ১০.১৮-তে। এছাড়া ভারতের পুঁজিবাজারের পিই রেশিও ২৪ এবং থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারের পিই রেশিও ছিল ১৮.৭২। এই সূচকটি ইতিবাচক থাকার পরও চলমান মন্দার কারণে স্বরূপে ফিরছে না পুঁজিবাজার।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ডিএসই’র তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ছিল ৫৮৬টি। ইস্যুকৃত মূলধন ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। মোট লেনদেন ছিল ২৪ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। সূচক ছিল ৪ হাজার ৯৪৭.৬৪ পয়েন্টে।

জুন ত্রৈমাসিকের তুলনায় সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ডিএসই লেনদেন বাড়লেও সূচকের পতন ঘটেছে। সেপ্টেম্বর শেষে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছিল ৩১৯টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছিল ৩৭টি, সরকারি বন্ড ২২১টি, ডিবেঞ্চার আটটি ও করপোরেট বন্ড একটি। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ৭৬০ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এপ্রিল-জুন সময়ে ৬২৬ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়। অথচ গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ১০৮ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়। সেপ্টেম্বর শেষে ইস্যুকৃত মূলধনের ট্রেজারি বন্ডের অংশ ছিল প্রায় ৪৩ শতাংশ। ব্যাংক খাতের ইস্যুকৃত মূলধনের অংশ ছিল ২৩ শতাংশ। একই সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের অংশ ছিল ৪ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশ ছিল প্রায় ৪ শতাংশ, বীমা কোম্পানিগুলোর অংশ ছিল প্রায় ২ শতাংশ এবং করপোরেট বন্ডের অংশ ছিল মাত্র ০.২৩ শতাংশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status