দেশ বিদেশ

ভারতে গান্ধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

কলকাতা প্রতিনিধি

১০ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

ভারতে গান্ধী পরিবারের ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি) নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন থেকে এসপিজি-র বদলে জেড প্লাস নিরাপত্তা পাবেন গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য-সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা। প্রায় তিন দশক পরে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা এসপিজি নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এসপিজি নিরাপত্তার অধিকারী হবেন। তবে গান্ধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলছেন, যে পরিবারের দু’জন সদস্য সন্ত্রাসবাদীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন, কীভাবে সেই পরিবারের নিরাপত্তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার? তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আদৌ নিরাপত্তা কমানো হচ্ছে না, বরং আরো সুসংহত করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতে নেতা থেকে মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য পাঁচটি আলাদা ক্যাটাগরির নিরাপত্তা প্রচলিত। সাধারণত ওই ব্যক্তির নিরাপত্তা কতটা সংশয়ের মধ্যে রয়েছে বা তার ওপর কতটা হামলার আশঙ্কা রয়েছে সেই ভিত্তিতেই ঠিক করা হয় কে কী ধরনের নিরাপত্তা পাবেন।

এসপিজি ছাড়া বাকি চারটি নিরাপত্তার স্তর হল জেড প্লাস, জেড, ওয়াই এবং এক্স। সাধারণ ভাবে জেড প্লাস নিরাপত্তা বলয়ের দায়িত্বে থাকেন ৩৬ থেকে ৫৫ জন উচ্চ প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী। সেই দলে থাকেন অন্তত ১০ জন কমান্ডো। গত কয়েক বছর ধরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর একটি অংশ স্পেশাল রেঞ্জার গ্রুপের প্রায় ৬০০ কমান্ডোকে মোতায়েন করা হয়েছে ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য। বাকি সদস্যরা সিআরপিএফ বা আইটিবিপি’র মতো কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্য। গোটা বাহিনীর হাতেই থাকে সর্বাধুনিক অস্ত্র এবং গ্যাজেট। ২৪ ঘণ্টা ওই বাহিনী ঘিরে থাকে ভিভিআইপিকে। এসপিজি নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতোই জেড প্লাস নিরাপত্তাতেও থাকে বুলেট প্রতিরোধী গাড়ি। রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, মুলায়ম সিংহসহ দেশের প্রায় ২০ জন ভিভিআইপি এই নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন।
এসজিপি নিরাপত্তা কী?

ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে  তৈরি করা এসপিজিকে বর্তমানে দেশের সব চেয়ে খরচবহুল নিরাপত্তা বাহিনী হিসাবে গণ্য করা হয়। বছরে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি রুপি খরচ করা হয় ওই বাহিনীর জন্য। এই বাহিনীতে রয়েছেন ৩ হাজারের বেশি সদস্য। নিরাপত্তা নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ বিশ্বের প্রথম সারির বলে মনে করা হয়। ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পরের বছর প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তৎকালীন ক্যাবিনেট সচিবের নির্দেশে গঠন করা  হয়েছিল বিশেষ বাহিনী ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি)। ১৯৮৮ সালের ২রা জুন সংসদে ‘এসপিজি বিল’ পাস করানো হয়েছিল। এসপিজি গঠনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের সদস্যদের এসপিজি নিরাপত্তা দেয়ার কোনো সংস্থান ছিল না আইনে। কিন্তু ১৯৯১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর ওই আইনে সংশোধন এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারকেও ওই নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এসপিজি আইন অনুযায়ী, সাবেক বা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মা-কে ‘পরিবার’ হিসেবে গ্রাহ্য করা হয়। সেই সংস্থান থেকেই ১৯৯১ সাল থেকে সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা এসপিজি নিরাপত্তা পান।

পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ছাড়ার পর ১০ বছর পর্যন্ত। তবে হামলার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে পাঁচ বছর পর ফের সংশোধন এনে ওই মেয়াদ অনির্দিষ্ট কাল করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকার ওই মেয়াদ একেবারে কমিয়ে এক বছর করে দিয়েছে। হামলার আশঙ্কা কতটা প্রতি বছর তা পর্যালোচনা করে সেই নিরাপত্তার মেয়াদ বাড়ানো সংক্রান্ত সংশোধনী আনা হয়েছিল এই আইনে। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের এসপিজি নিরাপত্তা এ বছর আগস্টেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এইচ ডি দেবগৌড়ার এসপিজি নিরাপত্তা অনেক আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status