বাংলারজমিন

বরগুনায় মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া

আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলের মানুষ

বরগুনার প্রতিনিধি

১০ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:১৯ পূর্বাহ্ন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাংলাদেশ-ভারত উপকূলের দিকে ক্রমশ ধেয়ে আসছে। উপকূলে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বরগুনায় থেমে থেমে ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। বরগুনার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা শুক্রবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে না গেলেও শনিবার সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় বরগুনার মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুলবুল মোকাবিলায় এখানে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুপুর ১২টার পর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হলেও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের খবর পেয়ে বেলা ১১টা থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে এসেছেন বৃদ্ধ মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, বুড়া বয়সে বাবা এমন বইন্যার কবলে পইরা জীবনডা খুয়ামু, হেইতে তাড়াতাড়ি আশ্রয় নিতে আইছি।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন আবদুর রহমান ও তার পরিবার। আবদুর রহমান বলেন, ১০ নম্বর বইন্যা আইতে আছে। মোর বাড়ি ঘরের যে অবস্থা, এট্টু বাতাস ছোডলেই ঘরডা ভাইঙ্গা পড়তে পারে। মোর গুরাগারা লইয়া হেইতে নিরাপদে আশ্রয় লইতে আইছি। পাথরঘাটা উপকূলীয় এলাকা পদ্মা, চরলাঠিমারা, গাববাড়িয়া বিষখালী নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, এখানকার বাসিন্দারা তাদের মালামাল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে চলেছেন, শিশু ও বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবকরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। বিষখালী নদী সংলগ্ন উত্তরণ আবাসনের বাসিন্দা আ. ছোবাহান বলেন, সিডরে সব কিছু খুয়াইছি, এখন কোনো কিছু খুয়াইতে চাই না। তাই আমরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অবস্থান নিয়েছি। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে কেন্দ্র করে উপকূলবর্তী এলাকায় ১০ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং শুরু করেছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয় যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই বেড়িবাঁধ এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। এখনো মাইকিং চলছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয়কারীদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মানুষের আশ্রয়ের জন্য ৩৪১টি সাইক্লোন শেল্টারসহ মোট ৫০৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে ৫ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ৪২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও ৩৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছেন। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, বরগুনায় ৩৪১টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ৫০৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে ৫ লক্ষাধিক লোক আশ্রয় নিতে পারবে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে, তাদের খাবারের জন্য চলছে খিচুরি রান্না। তিনি আরো জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লাখ টাকা, গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা, ২শ’ মেট্রিক টন চাল ও ৩৫০ প্যাকেট খাবার পেয়েছেন। তারা আরো ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রেখেছেন।

বরগুনা জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর পোর্ট কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, বরগুনা থেকে সকল রুটের নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বেশির ভাগ ট্রলারই পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে ফিরে এসেছে। বঙ্গোপসাগরে যারা ছিলেন তারাও ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status