এক্সক্লুসিভ

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি

চট্টগ্রামে নৌ ও বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১০ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:৪০ পূর্বাহ্ন

প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে ঝড়ো হাওয়ার আকারে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

অফিসের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আইলার  চেয়েও শক্তিশালী। বুলবুল-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইছে। চট্টগ্রামে শুক্রবার সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

এরপর শনিবার রাতে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে দু’বার বিপদ সংকেত নামিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়। একই বুলেটিনে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ থেকে ৯ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানান পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ কে এম ফরিদ আহমেদ। এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাতটার মধ্যে জেটি থেকে সব জাহাজ সরিয়ে দিয়ে সাগরের গভীর নোঙরে পাঠানো হয়েছে। ইয়ার্ড ও জেটিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলোকে রশি দিয়ে বেঁধে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসাবে এলার্ট ফোর জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, বন্দরের জেটিতে ষোলটি জাহাজ ছিল, সবগুলো বহিঃনোঙরে পাঠানো হয়েছে। বহিঃনোঙরে আগে থেকেই পঞ্চান্নটি জাহাজ ছিল। জাহাজগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামা, খালাস ও ডেলিভারিসহ সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সমুদ্র শান্ত ও স্বাভাবিক হলে বন্দরের কার্যক্রমও স্বাভাবিক হবে। সাগর উত্তাল থাকায় লাইটারেজ জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার-ছোট জাহাজ, সাধারণ নৌকাসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের যুগ্ম-পরিচালক হাজী শফিক আহমেদ জানান, বন্দরের বহিঃনোঙরে কোনো লাইটারেজ জাহাজ যাচ্ছে না। বহিঃনোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধ আছে।

কর্ণফুলী নদীতে এবং বিভিন্ন ঘাটে বৃহসপতিবার সকাল পর্যন্ত একশ’রও বেশি লাইটারেজ জাহাজ অবস্থান করছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরার নৌযানগুলোকে তীরে এনে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রায় ২০০ মাছ ধরার নৌযান এখন কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করছে। এ ছাড়া বিকাল ৪টা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান ওঠানামা কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এবিএম সারোয়ার-ই-জামান।

সারোয়ার-ই-জামান বলেন, আমরা হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। ঘূর্ণিঝড়ে প্রান্তিক (পেরিফেরিয়াল) আঘাতের সম্ভাবনার ফলে বিকাল ৪টা থেকে ফ্লাইট অপারেশন পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা ও পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডে বঙ্গোপসাগরের উপকূল রয়েছে। এসব উপকূল থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিতে ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। প্রতিটি উপজেলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও সম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবারও মজুত রাখতে বলা হয়েছে। ক্ষেতে পাকা ধান থাকলে সেগুলো কেটে ফেলার জন্য চাষিদের বলা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভয়াবহ এই বুলবুল মোকাবিলার জন্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি শ্রমিক, সেবক সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগরের রাস্তাঘাট পরিষ্কারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যে ৩ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সব জেলা-উপজেলায় জরুরি সভা করে সার্বিক প্রস্তুতির জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুত রয়েছে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী দল। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সভা করে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরো ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে তিনজন করে সদস্য রাখা হয়েছে। মোট ৮৫২ জন টিমের সদস্যকে সম্ভাব্য দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৯ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ এবং সাড়ে ৪ লাখ ওরস্যালাইনও মজুত আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status