প্রথম পাতা

ঢাকার রিকশা নিয়ে ইকোনমিস্টের রিপোর্ট

৯ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

অনেক পশ্চিমাদের কাছে রিকশা একটি আইকনিক এশীয় পরিবহনমাধ্যম হিসেবে পরিচিত। আদতে, বহু এশীয় দেশ বহু আগেই এই যানটি পরিত্যাগ করেছে (অন্যদিকে, কয়েকটি ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকান দেশে এর ব্যবহার চালু হয়েছে)। কিন্তু বাংলাদেশে রিকশা বরাবরের মতোই জনপ্রিয়। রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রত্যেক গলিতে তাদের ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে চলতে দেখা যায়। তবে, ঢাকার প্রশাসকরাও, যানটিকে অতীতে চালান করে দিতে ইচ্ছুক।

গত জুলাইয়ে ঢাকার সকল প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। ঢাকা উত্তরের মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, পুরো ঢাকা দুই বছরের মধ্যে ‘রিকশামুক্ত’ হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ধ্রুব আলম এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যায় বলেন, ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা রয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকের সামপ্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৮ সালে ঢাকায় যানজটে গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে তাঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। চলমান ধারায়, ২০৩৫ সালের মধ্যে গাড়ির চেয়ে হেঁটে যাওয়া দ্রুত হবে।

যানজটে বসে থাকা কেবল বিরক্তিকরই নয়, অপব্যয়ীও। বিশ্বব্যাংকের অনুমান অনুসারে, প্রতিদিন ঢাকার যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। যার কারণে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে কয়েকশ’ কোটি ডলার।
আলম জানান, ঢাকার যানজট সমস্যার একটি বড় কারণ হচ্ছে, রিকশার মতো ধীরগতির কিন্তু সহজে পরিচালনাসক্ষম যানগুলো। শহরটিতে ৬ থেকে ১০ লাখ রিকশা রয়েছে। সেগুলো চাইলে আচমকা লেন পরিবর্তন করতে পারে বা ইউ-টার্ন নিতে পারে। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে রিকশা সরানোর আরেকটি কারণ হচ্ছে এগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ। ঢাকায় চলাচলকারী রিকশার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৮০ হাজারের মতো রিকশার। ১৯৮৬ সালের পর থেকে কোনো রিকশাকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি।

ঢাকার বেশির ভাগ রিকশাচালকের অবশ্য এসব নিয়ে উদ্বেগ নেই। ৩২ বছর বয়সী রিকশাচালক আবদুল মুবিন বলেন, আমি কী করবো? আমার পরিবারকে খাওয়াতে হবে। জুলাইয়ে রিকশা নিষিদ্ধের প্রস্তাব ঘোষণার পরপর তিনিসহ কয়েক হাজার রিকশাচালক এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। বেশ কয়েকটি বড় সড়ক অবরোধ করে শহরজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি করে তারা।

রিকশা নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে কেবল চালকরাই উদ্বিগ্ন নন। শহরে লাখ লাখ রিকশা-মালিক (যারা চালকদের কাছে রিকশা ভাড়া দিয়ে থাকেন), তৈরিকারী, মিস্ত্রি ও খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রিকারীরাও এই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, ঢাকার যাত্রীরাতো রয়েছেন, যারা অন্যান্য যানের তুলনায় যাতায়াতের জন্য রিকশাই বেশি ব্যবহার করেন।

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ৩৫ লাখের মতো ‘ট্রিপ’ সমপন্ন করে বিভিন্ন যানবাহন। এর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশই হয়ে থাকে রিকশায়। গণপরিবহনের সংখ্যা নগণ্য। শহরের ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের জন্য বাস রয়েছে মাত্র ৮ হাজার। আরো খারাপ দিক হচ্ছে, এগুলো কোনোটাই সময়সূচি মেনে চলে না। বেশির ভাগ চালকেরই লাইসেন্স নেই। গত বছর দুই বাস যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। এরপর দেশজুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।

আলম প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, খুব শিগগিরই বাসগুলো একক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতের জন্য সেগুলো চলাচলের রাস্তা ঠিক করে দেয়া হবে। এছাড়া একটি মেট্রো সিস্টেমও নির্মানাধীন রয়েছে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এটি যানজট নিরসনের জন্য পর্যাপ্ত বড় বা সস্তা সেবা নিয়ে চালু হবে না। এদিকে, দিন দিন ঢাকায় ব্যক্তিগত মোটরগাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আলম বলেন, গণপরিবহনের অবস্থার উন্নতি না হলে, শিগগিরই সে গাড়িগুলো রিকশা নিষিদ্ধের সকল সুবিধা অকার্যকর করে দেবে। সঙ্গে যোগ করবে আরো নতুন কিছু সমস্যা।
মুবিন বলেন, রিকশা নিষিদ্ধ হলে ফের বিক্ষোভ করতে পারবে না। তারা অত্যন্ত দরিদ্র। তিনি এ সমস্যার কোনো প্রতিকার দেখছেন না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক নীতি তাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেন, ধনীরা মোটরসাইকেল ও মোটরগাড়ি কিনছে। তাদের অনেকের একাধিক গাড়িও আছে। রিকশা নিষিদ্ধ করলে তা কীভাবে যানজট নিরসনে সহায়ক হবে?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status