শেষের পাতা

বিএনপিতে আমার আর কন্ট্রিবিউশন করার মতো কিছু নেই

স্টাফ রিপোর্টার

৭ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। দীর্ঘদিন বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন চট্টগ্রামের এই নেতা। তিনি শুধু ভাইস চেয়ারম্যান থেকেই নয়, প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই পদত্যাগপত্র পাঠান মোরশেদ খান। পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সে ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।  তিনি বলেন, রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণ হেতু আমার উপলব্ধি, সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

চিঠিতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য নেতাকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত এবং অনেকেই বর্তমানে দলের হাল ধরে আছেন। প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি যেমন কামনা করি, তেমনি আপনিসহ বর্তমান সব কর্মী-কাণ্ডারিদেরও আমি মঙ্গলাকাঙ্খী। অতীত ও বর্তমান সব কর্মীর নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য, সখ্য, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং দলের কর্মী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিএনপি আমাকে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে।
পরে সার্বিক বিষয়ে মোরশেদ খান বলেন, ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে আমার উপলব্ধি হয়েছে যে, এই দলে আমার আর কনট্রিবিউশন করার কিছু নেই। এখন নবীনদের সুযোগ দেয়া উচিত। সেজন্য পদত্যাগ করেছি।

মোরশেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, জুন ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পলাতক থাকা অবস্থায় অবৈধ সম্পত্তি অর্জন ও সম্পত্তির তথ্য গোপনের মামলায় তার ১৩ বছরের কারাদণ্ড হলেও পরে অন্য অনেক রাজনীতিবিদের মতোই উচ্চ আদালতে তার সাজা বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের কাছে পরাজিত হন মোরশেদ খান। এরপর অসুস্থ থাকায় দলীয় কর্মসূচিতে তাকে তেমন একটা দেখা যায়নি। দীর্ঘ ১০ বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলেও বিএনপি তাকে বাদ দিয়ে আবু সুফিয়ানকে মনোনয়ন দেয়। মোরশেদ খান তখন থেকে দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না।

সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় চলতি বছর ১০ জুন মোরশেদ খানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিএনপি নেতা মোরশেদ খান একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের অন্যতম মালিক ও এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে একজন ছিলেন। দেনার দায়ে ২০১৬ সালে সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের বছর মোরশেদ খান, তার স্ত্রী নাছরিন খান ও সিটিসেলের এমডি মেহবুব চৌধুরীসহ ১৬ জনকে আসামি করে দুদক ওই মামলা করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status