দেশ বিদেশ

সিপিডির প্রতিবেদন

ভাতা পান না দেশের ৪০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৭ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, বাংলাদেশে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তার ৪০ ভাগই ভাতা পান না বা পেনশন সুবিধার বাইরে। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম আয়োজিত ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম‘ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এ তথ্য উঠে আসে। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। সভায় বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনিতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে গড় মজুরি ১৩ হাজার টাকা। এর ১৫ বা ২০ শতাংশ অবসর ভাতা হিসাবে দেয়া যেতে পারে। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের সবার জন্য ফ্ল্যাট রেট বা একই হারে অবসর ভাতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রণয়ন করতে হবে সার্বজনীন পেনশন আইন। এক্ষেত্রে ভারত বা মালদ্বীপের পরিকল্পনা উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রবন্ধে। দেশের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তা আরো বেশি নিশ্চিত করা দরকার। তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভাতা চালু করলে তা সামাজিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে বলে সভায় মন্তব্য করা হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকারই সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে পারবে। পেনশন স্কিমের আলোচনা যখন হচ্ছে আমরাই তখন কর্তৃত্বে আছি। এক টানা প্রায় ১ দশক কাজের কিছু প্রতিচ্ছবি আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। ৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথমে এ ধরনের কল্যাণমূলক কাজ শুরু করেন। এই ভাতার সুবিধা যেন অর্থনীতিতে বাধা সৃষ্টি না করে তা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভাতার পরিমাণ এমন করা যাবে না, যাতে সবাই কাজ বাদ দিয়ে ঘরে বসে পড়ে। অর্থনীতিতে যাতে কন্ট্রিবিউশন না কমে।
তিনি বলেন, সিপিডির গবেষণায় বলছে, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষকে আমরা নানাভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছি। বেশি এলাকা আমরা কাভার করে ফেলেছি, তিন ভাগের এক শতাংশ বাকি। আমরা মনে হয় আমরা পারব। সার্বজনীন পেনশন আমরা চালু করতে পারব। অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সেল ইতিমধ্যে এটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছে। আমরা চাই এটি চালু হোক। সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ চালু করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। বর্তমান সরকারের হাত ধরেই তা চালু হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পেনশন স্কিম চালু করতে মূলত ৫টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশজ আয়ের মাত্রা বাড়াতে না পারলে সরকারের পক্ষে এতো টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। ব্যক্তিখাত বা অনানুষ্ঠানিক খাত যদি এটির ভেতরে না আসে তাহলেও সমস্যা হবে। আর্থিক ব্যবস্থায় যদি গরিব মানুষের অংশগ্রহণ না আসে তাহলেও হবে না। প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা কাটাতে না পারলেও হবে না। ভালো কোনো একটি খাতে টাকাটা বিনিয়োগ করতে হবে। আমি ব্যাংক বা পুঁজি বাজারের কথা বলছি না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল আধুনিক মধ্যম আয়ের দেশ হবে, তার অর্ধেক মানুষের কোন সামাজিক নিরাপত্তা বা ভবিষ্যতের আয়ের ব্যাপারে বা অন্য কোন ঝুঁকির ব্যাপারে কোনো নিরাপত্তা থাকবে না এই জিনিসটা আমার কাছে পরিষ্কার না।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, চার ভাগের এক ভাগ মানুষ গভীর দারিদ্র্যে থাকবে। আবার অর্ধেক মানুষের কোন আর্থিক নিরাপত্তা নাই, এটা কোন আধুনিক মধ্য আয়ের দেশ হতে পারে না। তিনি বলেন, এটাকে বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। সেটা আমরা ক্রমান্বয়ে দেখতে পারছি।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে ১০ শতাংশের বেশি পেনশন কভারেজ নাই। একটা পেনশন চালু হলে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন, তাই আমাদের সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে। তিনি সার্বজনীন পেনশন চালু করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেন, পেনশনের পরিমাণটা পর্যাপ্ত হতে হবে। পেনশন স্কিম সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে হতে হবে এবং এটা টেকসই হতে হবে। জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন তাদেরকে উপরে নিয়ে আসতে হবে। সারাবিশ্বে যাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে তাদের দেশে সার্বজনীন পেনশন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বক্তরা জানান, ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে দেশের সকল নাগরিকের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় তৈরির সময় এসেছে। এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা মুখ্য, কিন্তু এটি সরকারের একমাত্র দায়িত্ব নয়। এখানে ব্যক্তিখাতের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status