অনলাইন

নুসরাত হত্যা মামলার আদ্যোপান্ত

ফেনী প্রতিনিধি

২৪ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

নুসরাত হত্যা। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডগুলো মধ্যে অন্যতম একটি হত্যা। এ হত্যা মামলাটি নানা কারণে আলোচিত ও ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে এ মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া হত্যা মামলার আলামত হিসেবে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার মামলার কোন ডকুমেন্ট প্রজেক্টরের মাধ্যমে আদালতে (গত ২৭ আগস্ট) উপস্থাপন করা হয়েছে। যা উপস্থিত সকল আইনজীবী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা শুনতে পায়। আদালতে প্রদর্শিত অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে আসামিদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও নুসরাতের জবানবন্দি সকলের সামনে উম্মোচিত হয়। যা এ মামলার মুল দলিল হিসেবে নথিতে রয়েছিল।

মামলার নথির বরাত দিয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, চলতি বছরের ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর জের ধরে গত ৬ই এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগিরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ১০ই এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। গত ৭ই এপ্রিল দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকদের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি (ডায়িং ডিক্লেরেশন) দেয়।

গত ৮ই এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। দুই দিন পর গত ১০ই এপ্রিল মামলাটি সোনাগাজী মডেল থানা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার পর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ ও দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মামলায় এজহার নামীয় ৮ জনসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে।
 
পিবিআই মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার ৩৩ কার্যদিবস শেষে (মোট ৫০ দিনের মধ্যে) গত ২৯শে মে ফেনীর    জেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) (আমলী আদালত সোনাগাজী) মো. জাকির হোসেনের আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম। ৮০৮ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ১৬ জন আসামির মধ্যে ১২ জন আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছিলো।


অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৯২ জনকে। এদের মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। ৭ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিমুলক স্বাক্ষ্য দিয়েছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রের সারমর্ম বিচারকের কাছে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, হত্যার সময়কালীন ঘটনার ডিজিটাল স্কেচও আদালতে তুলে ধরেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পিবিআই অভিযোগপত্রে ১৬ আসামির সবার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- চাওয়া হয়েছিল।

গত ৩০ মে সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। গত ১০ই জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চার্জগঠনের জন্য ২০শে জুন তারিখ ধার্য্য করেন। অভিযোগপত্রে নাম না থাকায় ওই সময় গ্রেপ্তার পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

নুসরাত হত্যা মামলার ৭২ দিনের মধ্যে গত ২০শে জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন (চার্জগঠন) করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৭শে জুন নির্ধারণ করে। গত ২৭শে জুন মামলার বাদি নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য নেয়ার মধ্যে দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর টানা ৩৭ কর্মদিবসে নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে আদালতে বাদীসহ ৮৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। গত ২৭শে আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলে গত ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। রাষ্ট্রপক্ষ, আসামীপক্ষ ও বাদিপক্ষের যুক্তি তর্ক শেষে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২৪শে অক্টোবর দিন ধার্য্য করে।

আইনজীবী শাহাজান সাজু আরও জানান, হত্যা মামলার আলামত হিসেবে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার মামলার কোন ডকুমেন্ট প্রজেক্টরের মাধ্যমে আদালতে (গত ২৭ আগস্ট) উপস্থাপন করা হয়েছে। যা উপস্থিত সকল আইনজীবী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা শুনতে পায়। আদালতে প্রদর্শিত অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে আসামিদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও নুসরাতের জবানবন্দি সকলের সামনে উম্মোচিত হয়। যা এ মামলার মুল দলিল হিসেবে নথিতে রয়েছিল।

কারাবন্দি অবস্থায় নুসরাত জাহান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুন নাহার মনি গত ২১শে সেপ্টেম্বর হাসপাতালে কন্যা সন্তান প্রসব করেন।

গত ১৫ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা, মা শিরিনা আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান। ওই সময় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের হাতে তাৎক্ষনিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৬ই মে নোমান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে যোগদান করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status