এক্সক্লুসিভ

হেনরি কিসিঞ্জার বললেন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতের কিনারে পৌঁছে দিয়েছিল

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

আবার আলোচনায় বহুল আলোচিত মার্কিন সাবেক কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার। ‘ইন্ডিয়া ইউএস স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামে’ যোগ দিতে ভারত এসে তিনি ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল সে বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, চীনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছিল উন্মুক্ত। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। হেনরি কিসিঞ্জারের বয়স এখন ৯৬ বছর। তিনি ওই ফোরামে বলেছেন, কীভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সংকট বা স্বাধীনতা যুদ্ধ ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে দিয়েছিল। বলেছেন, বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে অবস্থায় আছে এর মূলে রয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, বাংলাদেশ সংকট ওই সময় দুটি দেশকে সংঘাতের কিনারে পৌঁছে দিয়েছিল। এ বিষয়ে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিও আছে। তা সত্ত্বেও এ দুটি দেশ নিরাপত্তা ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমান্তরাল উন্নয়ন করতে পারতো।
পিটিআই লিখেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ভারত ও পাকিস্তান। ওই সময়ে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যুদ্ধজাহাজ বহনকারী ইউএসএস এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু একে দেখা হচ্ছিল ভারতের প্রতি ছদ্মবেশী হুমকি হিসেবে। হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ওই সময়টা ছিল শীতল যুদ্ধেরও সময়। তখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।

১৯৬১ সালে বার্লিন সংকটের সময় বার্লিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বাহিনীকে বেরিয়ে যেতে আল্টিমেটাম দেয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা ইউএসএসআর। এ প্রসঙ্গ টেনে কিসিঞ্জার বলেন, ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহেরু ও ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন না করায় মার্কিন সরকারের অনেকেই ছিলেন হতাশ। কিসিঞ্জারের ভাষায়, ভারত ছিল তখন ঐতিহাসিক বিবর্তনের সূচনালগ্নে। যেসব সমস্যা বেরিয়ে এসেছিল তার সবটা সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল না ভারতের কাছে। ভারত তখন তার নিজস্ব বিবর্তন ও নিরপেক্ষতার নীতিতে খুব বেশি মনোনিবেশ করেছিল।

তিনি আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল সেই সময়ে হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তার ভাষায়, আমরা এই সংকটকে দেখেছি বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় যে, শুধু মৌলিক বিবর্তনই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমান্তরাল উন্নয়ন করতে পারে। অনেক বছর ধরে আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছি যেখানে অনেক ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অভিন্ন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য রয়েছে।
হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। পূর্ববর্তী কোনো আয়োজন ছাড়াই এ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এই দু’দেশের মধ্যে। হেনরি কিসিঞ্জারের ভাষায়, যদি আপনি বিশ্বের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন পৃথিবীর প্রতিটি স্থান উত্তাল, অশান্তি বিরাজ করছে। আপনি অগত্যা তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি সাধারণ ধারণার বিকাশ ঘটাতে পারবেন না। কিন্তু আপনি শান্তি ও অগ্রগতির জন্য অত্যাবশ্যক কাজ করতে পারেন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। তারপরও আমি বলবো যে, এখন কোনো দুটি দেশ তাদের মধ্যে বন্ধুত্বকে বিকশিত করার মতো ভালো অবস্থানে নেই।

হেনরি কিসিঞ্জার বৈরিতার অবসান ও চীনের প্রতি উন্মুক্ত নীতির জন্য পরিচিত। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার জন্য তৎকালীন চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে সমঝোতায় দু’বছর সময় ব্যয় করেছেন। তার এই প্রচেষ্টা সফল হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পরে ওই সময় প্রথমবার প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীন সফরে যান রিচার্ড নিক্সন। তখনই সম্পর্কের বরফ গলে।
এই সমঝোতার জন্য তিনি আগে থেকে কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে মার্কিন সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, অন্য পক্ষ সম্পর্কে তার আগে থেকে কোনো ধারণা ছিল না। তাই তিনি তাদের চিন্তাভাবনা এবং তারা যে লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে তা বোঝার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status