শেষের পাতা

আস্থাহীনতায় কর্মসংস্থান কমছে বীমাখাতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২২ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো দেশের বীমা খাতেও দুরবস্থা চলছে। ফলে উন্নয়নের বিপরীতে দিন দিন এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়ছে। এর প্রভাবে বীমা কোম্পানিগুলোতে কমছে কর্মসংস্থান। স্বাভাবিক নিয়মে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা। কিন্তু এক বছরে উল্টো কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ৬ হাজার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু আস্থা সংকট নয় আরো বিভিন্ন কারণে কর্মসংস্থান কমেছে। এরমধ্যে রয়েছে- গ্রাহকদের বীমা দাবি পূরণে অনীহা, দক্ষ জনবলের অভাব, কোম্পানিগুলোর পেশাদারিত্বে ঘাটতি, সামগ্রিকভাবে এ খাতের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রযুক্তিগত দক্ষতায় পিছিয়ে থাকা, প্রয়োজনীয় আইন-কানুনে ঘাটতি এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, এ খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করেন তারা। এ জন্য বীমা কোম্পানি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে কঠোর হতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষ বাধ্য না হলে বীমা কোম্পানির কাছে যেতে চায় না। এতে সামগ্রিকভাবে বীমা শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

সুত্র জানায়, ২০১৮ সাল শেষে বীমা খাতে মোট জনবল ছিল ৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৬৫। এরমধ্যে সাধারণ বীমায় ১৯ হাজার ৬৪৬ এবং লাইফে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬১৯ জন। আগের বছরের তুলনায় ৫ হাজার ৯৫৬ জন কম। সামগ্রিকভাবে জনবল কমার হার ০.৯২ শতাংশ। এরমধ্যে সাধারণ বীমায় ১.০৯ এবং লাইফে ০.৯৮ শতাংশ।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৮টি। এরমধ্যে সাধারণ ইন্স্যুরেন্স ৪৬টি এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩২টি। এ খাতে মোট গ্রাহক ১ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার। এ হিসাবে দেশের মোট ৭.৯৪ শতাংশ মানুষ বীমার আওতায় রয়েছে। এরমধ্যে সাধারণ বীমার গ্রাহক ২৪ লাখ ১৯ হাজার এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১ কোটি ১৯ লাখ ৮২ হাজার জন। আগের বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে গ্রাহক বৃদ্ধির পেয়েছে ৫.৫২ শতাংশ। এর মধ্যে লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বেড়েছে ৯ শতাংশ এবং সাধারণ বীমা ০.০৪ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ০.৫৫ শতাংশ।

বীমা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য বীমা বাধ্যতামূলক। এরমধ্যে রয়েছে, অগ্নিবীমাসহ বিভিন্ন ঝুঁকি বীমা। আর এজন্য বীমা কোম্পানিকে মোটা অংকের প্রিমিয়াম দিতে হয়। এক্ষেত্রে কোম্পানিতে আগুন লাগাসহ অন্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বীমা কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা। বিদ্যমান আইনে কোনো গ্রাহকের বীমা দাবি উত্থাপন হলে সার্ভে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ওই দাবি পরিশোধ করা বীমা কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু গ্রাহকের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির হয়রানি ও প্রতারণা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ না করে নানা রকম টালবাহানা করে কোম্পানিগুলো। নানা অজুহাতে গ্রাহকের পাওনা টাকা না দিয়ে বেশিরভাগ কোম্পানি হয়রানি ও প্রতারণা করে।

জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ জমা আছে। জীবন বীমার পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে ৬ হাজার গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না ৫ জীবন বীমা কোম্পানি। জমানো টাকা ফিরে পেতে প্রতিদিনই তারা আইডিআরের অফিসে ভিড় করছেন। আইডিআরএ বলছে, দাবি পূরণের সংখ্যা বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে সাধারণ ও জীবন বীমা মিলিয়ে ২০১৭ সালে মোট বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ পরিশোধের হার ৬৮.৫২ শতাংশ।

আইডিআরের সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, দাবি পূরণে সমস্যা আছে। তবে অগ্রগতি হচ্ছে। তবে যারা দাবি পূরণ করতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status