বাংলারজমিন
সুবর্ণচরে সাক্ষ্য দিতে এসে ভিকটিমের কান্না
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
২২ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ধানের শীষে ভোট দেয়ার অভিযোগে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের নেতৃত্বে শ্যালো মেশিন চালিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় গতকাল সাক্ষ্য দিতে এসে ভিকটিমের কান্নায় আদালত প্রাঙ্গণে অনেকের চোখে অশ্রু ঝরে। পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে ৪ সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ মামলায় গতকাল ধর্ষিতা (৪০) সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দি দিতে গিয়ে তিনি কাঁদলেন, কাঁদালেন আদালতে থাকা আইনজীবী, সাংবাদিক, আদালত স্টাফ এমনকি পুলিশকেও। পিলে চমকালো তথ্যে। কিছুক্ষণ এজলাসে থাকা আদালত (জজ) ও স্তম্ভিত থাকেন। নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) শামছু উদ্দিন খালেদের আদালতে গতকাল ভোটের দিন ধানের শীষে ভোট দেয়ায় রাতে সুবর্ণচর বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৪ সন্তানের জননীকে (৪০) গণধর্ষণ মামলায় ধর্ষিতা আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আদালতের পিপি মামুনুর রশিদ লাবলু মানবজমিনকে জানায়, আদালতে সাক্ষী দিতে দাঁড়িয়ে ধর্ষিতা যখন ঘটনার বিভীষিকাময় রাতে তার বাড়িতে হামলা, তার স্বামী, ছেলে মেয়েদের বেঁধে রাখা, অস্ত্রের মুখে তাকে টেনে হিঁচরে ঘর থেকে বের করা, রান্না ঘরের পেছনে পুকুর পাড়ে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ করার কাহিনী যখন বর্ণনা করছিলন তখন তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে গোটা আদালত স্তব্ধ হয়ে যায়। আদালত বার বার তাকে সান্ত্বনা দিলেও তার কান্না থামছিল না। এ সময় আইনজীবী, সাংবাদিক, কোর্ট পুলিশ সবার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে। কোর্টে থানা মহিলা পুলিশরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কান্না থামিয়ে ধর্ষিতা বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন এসে তার স্বামী সিরাজ মিয়ার নাম ধরে পুলিশ এসেছে ডাকাডাকি করলে তিনি দরজা খুলে দেয়। তখন তাড়াহুড়া করে আসামি সালাহ উদ্দিন, বেচু, সোহেলসহ আরো ৩-৪ জন ঘরে ঢুকে। তারা তার স্বামী সিরাজ মিয়াকে শীতের মাপলার দিয়ে, মেয়ে শাবনুর ও আইনুরকে তাদের ওড়না দিয়ে, ছেলে কুদ্দুছকে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে। তাকে তার ব্লাউজ ছিঁড়ে মুখ বেঁধে ঘরের বাইরে থাকা সব আসামি ধর্ষণ করে। পরদিন সকাল ৮টায় তার জ্ঞান ফিরে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য তার স্বামী সিএনজি আনলে রুহুল আমিন ও তার বাহিনী তা তাড়িয়ে দেয়। পরে তার দেবর নোয়াখালী থেকে এম্বুলেন্স এনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার জবানবন্দির পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। বাদীর পক্ষে পিপিকে সহায়তা করেন সিনিয়র আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ। আসামি পক্ষে ছিলেন হারুনুর রশিদ হাওলাদার। আগামী সাক্ষীর তারিখ ৩১শে অক্টোবর ১৯ইং। উল্লেখ্য, ৩১শে ডিসেম্বর ১৮ইং তারিখ সকালে দৈনিক মানবজমিন অনলাইনে এক্সক্লুসিভ এ সংবাদটি প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তৎকালীন চরজব্বর থানার ওসি মামলা নিতে গড়িমসি করলে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এ গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়। সেই ওসি নিজামকে ডিআইজির নির্দেশে ক্লোজ করা হয়।