বাংলারজমিন

মাদবপুর উচ্চ বিদ্যালয়

কোনো নির্দেশনাই আমলে নিচ্ছে না ব্যবস্থাপনা কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

২০ অক্টোবর ২০১৯, রবিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে ব্রাহ্মণপাড়ার মাদবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও তার বেতন বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিয়া মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এঘটনায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বরে দশম শ্রেণির ১৭৫ জন পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও কৃতকার্য হয় মাত্র ৯১ জন। অকৃতকার্য হয় ৮৪ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ৯১ জনকে এসএসসি-২০১৮’র জন্য ফরম পূরণ করান। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অকৃতকার্যদের ফরম পূরণ করাতে অনুরোধ করলে প্রধান শিক্ষক অসম্মতি জানান। একপর্যায়ে সভাপতি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে গোপনে অবৈধ উপায়ে ফরম পূরণের চেষ্টা করে বোর্ডের তৎপরতায় ব্যর্থ হন। এর জেরে গত বছরের ৬ জানুয়ারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর অন্যায়ভাবে বরখাস্তের প্রতিকার চেয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করেন প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম সরকার। একই সময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন ব্রাহ্মণপাড়ার গোলাম সারওয়ার ও মাসুদ সরকার। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষকের আবেদন তদন্ত করতে উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক-২ মো. জাহিদুল হককে এবং গোলাম সারওয়ার ও মাসুদ সরকারের অভিযোগের তদন্ত করতে তৎকালীন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করেন। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক-২, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ৩টি তদন্ত রিপোর্টে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বরং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের সত্যতা  পাওয়া যায়। এ  প্রেক্ষিতে গত বছরের ৮ই আগস্ট কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কমিটির সভাপতি ১৪ই আগস্ট নোটিশের জবাব দেন। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪২ ধারা লঙ্ঘন করে ম্যানেজিং কমিটি কতৃক কো-অপ্ট সদস্যকে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কার্যবিরণী বহি প্রধান শিক্ষকের নিকট হতে বিধি বহির্ভূতভাবে সভাপতির নিকট নিয়ে নেয়া, ০৬/১২/২১৭ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির কার্যবিবরণী বহি ও ২৭/১২/২০১৭ইং তারিখের নোটিশ বহিতে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর না থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বোর্ড কতৃক জারিকৃত কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর প্রবিধান ৩৮ মোতাবেক গত ২৭শে ডিসেম্বর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ মাদবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল ঘোষণা করে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এরপর চলতি বছরের ১১ই মার্চ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার  ফৌজিয়া ছিদ্দিকাকে সভাপতি করে ৬ মাসের মেয়াদে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে ২৭শে জুন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিটেশন কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তাদের উপস্থাপিত বক্তব্য ও দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে আপিল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহাল করে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করতে এডহক কমিটিকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড কতৃপক্ষ। যদিও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বোর্ড তখন ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপে গত ১০ই জুলাই বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষককে তাঁর প্রাপ্য বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ এবং চাকরিতে পুনর্বহালে এডহক কমিটিকে নির্দেশ দেন। বোর্ডের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এডহক কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ৭ই আগস্ট প্রধান শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ৪ মাসের অর্ধবেতন ভাতাদি ছাড় দেন। পরে ৩রা আগস্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বে বাতিলকৃত কমিটির ৬ সদস্য নতুন কমিটিতে পুনর্নির্বাচিত হন। নির্বাচিত সদস্যদের সমর্থনে বাতিল হওয়া কমিটির সভাপতি মিয়া মো. জাহাঙ্গীর পুনরায় নতুন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১২ই সেপ্টেম্বর নতুন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে প্রধান শিক্ষককে বেতন দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। গত ১০ই অক্টোবর চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে বিদ্যালয় পরির্শক মো. আজহারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও বেতন বন্ধ করার ঘটনায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অন্যায় আবদারে সায় না দেয়ায় আমাকে ব্যবস্থাপনা কমিটির রোষানলে পড়তে হয়েছে। বিগত ২০ মাস অন্যায়ভাবে আমার বেতন থাতা বন্ধ রাখায় আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি শিক্ষামন্ত্রীর নিকট ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।  এবিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থ্‌াপনা কমিটির সভাপতি মিয়া মো. জাহাঙ্গীর বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কোন নোটিশ আমি এখনো হাতে পাইনি। নোটিশ ফেলে জবাব দেব। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুস ছালাম বলেন, মাদবপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অন্যায়ভাবে হয়রানি এবং নির্দেশনা অমান্য করার কারণে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status