শেষের পাতা

ভারতের সব রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে

কলকাতা প্রতিনিধি

১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

সারা দেশে এনআরসি চালু করার ইঙ্গিত দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নিউজ১৮-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, দেশের নানা প্রান্তে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে।  কারণ, সরকার গোটা দেশে এনআরসি চালু করার জন্য ‘আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে নাগরিকত্ব খারিজ করার প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করার দায়িত্ব ফরেনারস ট্রাইব্যুনালের। কিন্তু তার পরের পর্বটার জন্য প্রস্তুতি প্রক্রিয়াটা সবে শুরু হয়েছে। আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার আগেই অনেকের নাগরিকত্বকে ‘সন্দেহজনক’ আখ্যা দিয়ে তাদের ‘ডি-ভোটার’ করে দেয়া হয়েছিল। অনেককেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে। আসামে বিভিন্ন জেলায় জেলের মধ্যেই ৬টি ডিটেনশন সেন্টার চালু করে প্রায় হাজার খানেক মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। এ বার গোয়ালপাড়ায় প্রায় তিনহাজার বিদেশিকে রাখার জন্য আলাদা জমি চিহ্নিত করে সেখানে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি শুরু হয়েছে। এদিকে, বিজেপি শাসিত কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রেও তৈরি হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্প। কর্নাটকে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে বেঙ্গালুরু থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সোন্ডেকোপ্পায়।

সে রাজ্যের প্রশাসন যদিও ওই পরিকাঠামোর বিষয়ে বলার সময়ে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ শব্দটি ব্যবহার করছে না। বলা হচ্ছে ‘গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ (মুভমেন্ট রেস্ট্রিকশন সেন্টার)। আর মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বইতে যে ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে রাজ্য প্রশাসন সতর্কতার সঙ্গে জানিয়েছে, বেআইনি পাসপোর্ট মামলায় অভিযুক্তদের ওখানে রাখা হবে। অমিত শাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, এনআরসি নিয়ে পিছু হঠার কথা একেবারেই ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভারতের সবকটি রাজ্যকে এক নির্দেশিকা পাঠিয়ে সব রাজ্যের জেলায় একটি করে ডিটেনশন ক্যাস্প তৈরি করতে বলেছে। এদিকে, আসামে ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আসামের বাঙালিরা ফের সোচ্চার হয়েছেন। আসামের তেজপুর, গোয়ালপাড়া, শিলচর, ডিব্রুগড়, কোকড়াঝাড় ও জোরহাট জেলায় জেলের মধ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে বন্দিদের রাখা হয়েছে। গত ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডিটেনশন ক্যাম্পে ২৬ জন বিদেশি চিহ্নিত ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে তেজপুর ও গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০ জন করে বন্দি মারা গেছে। শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে ৩ জন, কোকড়াঝাড়ে ২ জন এবং জোরহাটে ১ জন মারা গেছে। তবে ডিব্রুগড় ডিটেনশন ক্যাম্পে  এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। এই মৃতের তালিকায় আছে ১২ জন হিন্দু ও ১৩ জন মুসলিম। মৃত অপর ব্যক্তি অন্য সমপ্রদায়ের।

ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে না খেয়ে ও কারারক্ষীদের জুলুমের শিকার হয়ে বন্দিদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ মৃত্যুটি ঘটেছে গত রোববার। তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থাকা দুলাল চন্দ্র পাল (৬৪) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি আসামের ঢেকিয়াজুলির আলিসিঙ্গা গ্রামে। তবে তার পরিবারের লোকজন মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেছেন। মৃতের পুত্র আশীষ পালের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত তার বাবাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মৃতদেহ নেবেন না। বাবা যদি বাংলাদেশিই হন তবে তাকে সে দেশেই পাঠিয়ে দিক সরকার। বন্দি শিবিরে মৃত্যুর ঘটনায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ সনোয়ালের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আসামের মানবাধিকার সংগঠন ‘আমরা বাঙালি’ এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সচিব সাধন পুরকায়স্থ। তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষকে ‘বিদেশি’ বানিয়ে হত্যা করছে। তিনি জানান, এই মৃতের তালিকায় ৪৫ দিনের শিশু থেকে ৮৬ বছরের প্রবীণ ব্যক্তিরা রয়েছেন। আসামের আমরা বাঙালি, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি, সারা ভারত বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থা দুলাল পালকে ভারতের নাগরিকত্ব দিয়ে তার দেহের শেষকৃত্য করার দাবি জানিয়েছে। এই দাবিতে গতকাল থেকে দুলাল পালের গ্রাম ঢেকিয়াজুলির আলিসিঙ্গায় শুরু হয়েছে প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status