অনলাইন

যেভাবে টেন্ডার সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১:৫৩ পূর্বাহ্ন

টেন্ডার মুঘল জি কে শামীম। বড় বড় সব সরকারি কাজ ছিল তার কব্জায়। শুধু তার নিজের প্রতিষ্ঠান জিকে এন্ড বি কোম্পানির নামেই তিন হাজার কোটি টাকার কাজ চলছিল। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আরও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার কাজ তার দখলে ছিল। অন্য কোম্পানির কাজ চললেও সেখান থেকে নিয়মিত কমিশন পেতেন জিকে শামীম। আর এসব করতে তার কৌশলেরও অভাব ছিলো না।

সংশ্লিষ্টদের নিজের কব্জায় রাখতে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও করতেন। গোপন ক্যামেরায় সেগুলোর আপত্তিকর ভিডিও ধারন করে পরবর্তীতে ফাঁদে ফেলতেন। ফলে তার পক্ষে আর কাজ না করে উপায় থাকতো না তাদের। মোট কথা, হুমকি-ধামকি, ভয়ভীতি, ঘুষ প্রদান, সুন্দরী নারী সাপ্লাই, ব্লাকমেইলিং- সবই ছিলো তার টেন্ডার বাগানোর অন্যতম কৌশল। আর এসব কাজে তার সহযোগি ছিলেন আট থেকে দশজন। দু’দফায় ১৯ দিনের রিমান্ডে তার কাছ থেকে এমন চাঞ্চলকর তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, টেন্ডার বাগিয়ে নেয়ার কৌশল হিসেবে নিকেতনে থাকা জি কে শামীমের তার ৭-৮টি ফ্ল্যাটে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হতো। সেখানে আসতো বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বড় বড় প্রকৌশলীরা। গোপন ক্যামেরায় নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করা হতো। পরবর্তীতে ওইসব দেখিয়ে তার পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হতো।

সূত্র আরও জানায়, জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন অনেকে। এদের মধ্যে তারা তাকে টেন্ডার পাইয়ে দিতে বা নিয়ন্ত্রণ নিতে সহযোগিতা করতেন। এরা হলেন তালিকায় ওঠে এসেছে, সজল, রণক, মোল্লা, জন, মিলন, সজল, দিদার, রনি। তাদের একেকজনের কাজ ভাগ করা ছিল। একেক জন জিকে শামীমের কাজের একেকদিন সামলাতেন।

এদের মধ্যে সজল দরপত্র আহ্বান করার পরপরই মনিটরিং করতেন। ওই সময় তার কাজ ছিলো, কোন কোম্পানি টেন্ডারে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার খোঁজ-খবর নেয়। এরপর সেখান থেকে সরে দাঁড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিককে হুমকি দিতেন। পরে রণক ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে তাদের বিভিন্ন কৌশলে ম্যানেজ করতেন। এ সময় রানা মোল্লা, জন, মিলন, সজল, দিদার, রনি সঙ্গে নিতেন রণক। এই সহযোগীদের খুঁজছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তাদের ওপর নজর হচ্ছে। তারা যেনো দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য সবকটি স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জি কে শামীম নিজেই এসবের সমমন্বয় করতেন। তবে কখনো কখনো তার অনুপস্থিতিতে দেখাশোনা করতেন তার বড় ভাই নাসিম।

ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত ২০শে সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ জব্দ করে র‌্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে। পরবর্তীতে দুই দফায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং মামলায় ১৯ দিনের রিমান্ড শেষে গত রোববার আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status