অনলাইন

মেয়ে ভারতে পাচার, দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

১৫ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৩:১৬ পূর্বাহ্ন

এক বছর হলো অপহরণের শিকার হয়ে ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের একটি ‘শিশু নিরাপত্তা হেফাজতে’ অবস্থান করছে ১৪ বছরের এক কিশোরী। গত বছরের ১৪ই নভেম্বরে তাকে অপহরণ করে ভারতে পাচার করা হয়। ভারতে অবস্থানের কথা জানতে পেরে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে থানার ওসিসহ বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একরামুল ইসলাম। কিন্তু বিষয়টি দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় সহজে মেয়েকে ফেরত পাচ্ছেন না বাবা। এ অবস্থায় সংশয়ে রয়েছেন একরামুল।

একরামুল ইসলাম রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার দোহাজারি পানো কাপড়িয়ার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
 
পরিবার ও থানায় মামলা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো ওই কিশোরী। গত বছরের ১৪ই নভেম্বর সকাল ৯টায় জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর সে আর বাড়িতে ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে গত ১৮ই নভেম্বর তারাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন বাবা একরামুল।

পরে তিনি জানতে পারেন মেয়ে ঢাকায় আছে। ঢাকায় এসে ঠিকানা অনুযায়ী মেয়ের সঙ্গে দেখাও করেন। কিন্তু অপহরণকারীদের বাধার মুখে মেয়েকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। পরে ঢাকায় অবস্থানরত শ্যালক সবুজ মিয়ার কাছে ছুটে যান একরামুল। তারা ফিরে গিয়ে সেখানে আর কিশোরীকে খুঁজে পাননি। এতে একরামুল কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
 
এ অবস্থায় চলতি বছরের ২৫ই মে একটি নম্বর (০০৯১৯৪১৬৪১২২৮১) থেকে কিশোরীর চাচি নিমলী বেগমের মুঠোফোনে মেসেজ আসে। সেখানে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে- ‘আঁখি (ছদ্মনাম) ইজ ইন সেইফ কাস্টডি অফ সিডব্লিউসি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি পানিপথ ইন হরিয়ানা ইন্ডিয়া, গো টু পুলিশ অ্যান্ড আস্ক টু গেট হার থ্রু পুলিশ।’ এ বার্তা পেয়ে তার বাবা একরামুল ছুটে যান তারাগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে। ওসি জিন্নাত আলী ওই ফোন নাম্বারে কল করে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন এবং কিভাবে পাচার হয়েছে তার বর্ণনা শোনেন। কিন্তু ওসি আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে কিছুদিন সময় নেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় পাচারকারিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

অবশেষে, ১৯শে জুন মা দয়ালী বেগমকে বাদী করে তারাগঞ্জ থানায় একটি মামলা নেয় পুলিশ। আসামি করা হয় পাঁচজনকে। মানবপাচার আইনে দায়ের করা মামলায় পুলিশ এজাহারভুক্ত মানিক (৩৫) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তারও করে। অন্য আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনে রিপোর্ট পাঠিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাকে ফেরাতে সবাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি এখন দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। পাচারকারী আসলেই কে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারপরও এজাহার নামীয় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।  

এদিকে তারাগঞ্জ থানার ওসির ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করে বাবা একরামুল বলেন, ভারতের ওই ফোন নাম্বারে কল করে ওসি সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর মামলা নিয়েছেন। তিনি বলেন, একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত হয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সকল মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status