বাংলারজমিন

ঘাটাইলে ২০ কি. মি. রাস্তায় খানাখন্দ

এ.বি.এম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে

১৫ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার- পোড়াবাড়ি ব্যবস্থা, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করার বিকল্প ট্রানজিট রাস্তা হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ের বুক চিরে বইয়ে যাওয়া এই রাস্তাটি অবহেলিত পাহাড়ি জনপথকে যেমন আলোকিত করেছে, তেমনি ভৌগোলিক ভাবেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছেন। এক সময় পায়ে হেঁটে, লুঙ্গি গুটিয়ে, গরুর গাড়িতে চলাচল করতে হতো। এসব অঞ্চলে পাকা-রাস্তা হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সবজি, আম, কাঁঠাল, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি কৃষকের উৎপাদিত এসব ফসল মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিপুল মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোডটি তৈরি হয়েছিল, বর্তমানে সেই রোডটিই মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা, নিম্নমানের ইট, বালু, খোয়া, বিটুমিন ব্যবহার করে পরের বছরের শেষ দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটি খুলে দেয়া হয়। উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রভমেন্ট প্রজেক্টের (আরটিআইপি-২) এর আওতায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি মেসার্স আলম কনস্ট্রাকশন এন্ড সৈয়দ মজিবর রহমান  (জেভি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। এতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন বিশ্ব ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (আইডিএ)। মাত্র আড়াই বছরের মাথায় নবনির্মিত এই সড়কটি যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য এরই মধ্যে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের দুই ধারে যেমন বড় বড় গর্ত ও ভাঙনের প্রকোপ দেখা দিয়েছে তেমনি পুরো রাস্তা জুড়েই রয়েছে- খানাখন্দ, গর্ত ও ডায়ভার্সন। বিশেষ করে নলমা টেপিমোদন নামক স্থানে রাস্তার মাঝখানে গভীর গর্তের তৈরি হয়েছে।
অপর দিকে পোড়াবাড়ী-গারোবাজার এই ২০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে অন্তত ৯৫টি বাঁক পাড়ি দিতে হয়। যেটা সত্যিকার অর্থেই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ স্থানেই বাঁকগুলোতে দিক নির্দেশনামূলক কোনো সাইনবোর্ড নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে- ঘোনার দেউলি, আঙ্গারখোলা, খাগরাটা, চৈথট্ট, রসুলপুর, মোমিনপুর, ছনখোলা, মানিকপুর মোড়গুলোই বেশি বিপজ্জনক। সেই সঙ্গে নলমা বাজার থেকে খাগরাটা পর্যন্ত রাস্তাটি পুরোটাই চলাচলের অনুপযোগী। একটি বাঁক ঘুরতে না ঘুরতেই আরেকটি বাঁক পাড়ি দিতে হয়। বাঁকগুলো এতটাই অনিরাপদ যে, এক পাশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অন্য পাশ থেকে অন্য যানবাহন আসলেও অনেক সময় খেয়াল করা সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় হাট-বাজার, দোকানপাট, ব্যাংক বীমাসহ মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট কোমলমতি শিশু, শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে।
এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ আলী বলেন- পাহাড়ি মাটি সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিণত হয়ে নিচের দিকে ডেবে যায়। এ কারণেই রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটি নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তাই পুরনো আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তার উপর দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করতে হয়েছে। এজন্যই সড়কে বাঁক বেশি। জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা থাকলে সড়কটি সোজা হতো এর দৈর্ঘ্যও কমে যেত। যেসব জায়গায় বাঁক নির্দেশক সাইনবোর্ড নেই সেখানে অতিদ্রুত সাইনবোর্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status