এক্সক্লুসিভ

পচছে পিয়াজ বাড়ছে দাম

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৩ অক্টোবর ২০১৯, রবিবার, ৮:১৫ পূর্বাহ্ন

পুরাতন এলসিতে ভারত থেকে যেসব পিয়াজ বাংলাদেশে এসেছে তার অর্ধেকেরও বেশি পচা ও নিম্নমানের। যা ফেলে দেয়ার পাশাপাশি কম দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পচা পিয়াজের ক্ষতি পোষাতে ভালো পিয়াজও বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে পিয়াজ যতই পচছে দাম ততই বাড়ছে।  

এমন তথ্য জানালেন চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, শুক্র ও শনিবার ভারত থেকে পুরাতন এলসির পিয়াজ দেশে এসেছে। এরমধ্যে খাতুনগঞ্জে এসেছে ৪০টি ট্রাক। যার ৬০ ভাগ পিয়াজই পচা। যা অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সমপাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, অনেকগুলো পিয়াজ পচে যাওয়ায় দাম কমিয়ে দ্রুত বিক্রি করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট যে দামে বিক্রি করতে বলেছেন, বর্তমানে তার থেকেও কম দামে পিয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। যার চাপ বাড়ছে ভালো মানের পিয়াজের ওপর। খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচা ভোগ্যপণ্যের আড়তদার জাবেদ ইকবাল বলেন, বাজারে পিয়াজের আমদানি বেড়েছে। তাই দাম আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। তবে অনেকগুলো পিয়াজ পচা ও নষ্ট অবস্থায় আসছে। ফলে ব্যবসায়ীদের অল্প দামে সেগুলো বিক্রি এবং ভালোমানের পিয়াজ বেশি দামে বিক্রি করে পুঁজি ধরে রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে ভারতীয় পিয়াজের প্রায় ৪০টি ট্রাক (১৩-১৪ টনের) খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে।

একইভাবে মিয়ানমারের প্রায় ১০০টি পিয়াজভর্তি ট্রাক (১৩-১৪ টনের) বাজারে এসেছে। তবে গতকাল শনিবার মিয়ানমারের মাত্র ৩-৪টি গাড়ি এসেছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি পিয়াজ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতের পুরাতন এলসিগুলোতে চুক্তি অনুযায়ী রপ্তানিকারকদের টাকা পরিশোধ করলেও তারা পচা পিয়াজ দিচ্ছে। যা অর্ধেক ও তার চেয়ে কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেক পুঁজি হারাতে হচ্ছে তাদের। একইভাবে মিয়ানমার থেকেও পিয়াজ আমদানি অনেক বেড়েছে। তবে সেখানেও নদীপথে ট্রলারে সময়ক্ষেপণের জন্য অনেক পিয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আবার বাকিগুলোর কিছু অংশ বাজারে আসতে আসতে অনেকটাই বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের পিয়াজেও আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এমন পরিস্থিতিতে পিয়াজের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।

খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ভারতের পিয়াজ পাইকারিতে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। পচা ও নিম্নমানের পিয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। মিয়ানমারের পিয়াজ পাইকারিতে বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়, খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আর পচা ও নিম্নমানের পিয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়, খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। যা আগের সপ্তাহে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা কম ছিল।

তবে এর আগে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে দেশের বাজার। মূলত বিভিন্ন আমদানিকারকের কারসাজিতেই দেশের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। তাদের চাপে আড়তদাররা পাইকারিতে ৮০-১০০ টাকা দামে পিয়াজ বিক্রি করতে শুরু করে। খুচরায় ১২০ টাকায় উঠে পিয়াজের কেজি।

এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে ১লা অক্টোবর চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। সেখানে বেশকিছু আড়তে প্রচুর পিয়াজ মজুতের পাশাপাশি দাম বাড়ানোতে বিভিন্ন আমদানিকারকের কারসাজির প্রমাণ পান তিনি। পরে একটি আড়তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি প্রতি কেজি পিয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি করতে আড়তদারদের কাছ থেকে মুচলেকা নেন ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status