প্রথম পাতা

বিদেশিদের প্রতিক্রিয়ায় নাখোশ ঢাকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১১ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারানো বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ঘটনার ‘বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত’ এবং ‘অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়ায় নাখোশ ঢাকা। এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়া দেখানো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ তথা জাতিসংঘের প্রতিনিধির প্রতি ‘বিরক্তি’ প্রকাশ করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কাছে সরকারের ‘পাল্টা প্রতিক্রিয়া’ ব্যক্ত করা হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, এ নিয়ে বৃটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সেগুনবাগিচার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে ঢাকার ‘নাখোশ হওয়ার’ বার্তাটি স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে বৈঠকটি কোথায় হয়েছে? এবং কোন কর্মকর্তা রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কথা বলেছেন? সে স্থান ও অফিসার সম্পর্কে তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়ার কড়া সমালোচনা করেন। মন্ত্রী এ সময় কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন রাখেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোন স্কুলে যখন গোলাগুলি হয়, তখন কি আপনারা (কূটনীতিকরা) প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন? যখন পাকিস্তানের শিয়া মসজিদ পুড়িয়ে দেয়া হয়, তখন কি  প্রতিক্রিয়া জানান? অতীতে যখন বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তখন কি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন? মন্ত্রী বলেন, ‘এখন যারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাদের বলবো, কূটনৈতিক শিষ্টাচার যাতে রক্ষিত হয়, সেভাবে আপনারা বক্তব্য রাখুন। এভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বক্তব্য রাখা সমীচীন নয়।’ উল্লেখ্য, শনিবার ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে প্রচারিত এক পেস্টে ‘বুয়েট’কে হ্যাশট্যাগ করে বৃটেনের তরফে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছিল।

বার্তাটি এখনও বহাল রয়েছে। সেখানে লেখাটি এ রকম- ‘#বুয়েট-এ ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। যুক্তরাজ্য বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রসঙ্গে নিঃশর্তভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ একই দিনে ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর থেকে প্রচারিত বার্তা এবং কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সঙ্গে আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পোর মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন ভাষায় জাতিসংঘের তরফে ওই হত্যাকান্ডের নিন্দা জানানো হয়। বলা হয়- মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। এর চর্চার জন্য কাউকে হয়রানি, নির্যাতন ও হত্যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। আবরারের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের তাৎক্ষণিক অ্যাকশনের প্রশংসা করে এ ঘটনার ‘স্বাধীন তদন্তের’ আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়- স্বাধীন তদন্তই ‘সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় বিচার’ ও ঘটনার ‘পুনরাবৃত্তি রোধে’ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। এতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু ওই সব ঘটনায় দায়ীদের দৃশ্যত ‘দায়মুক্তি’ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বুয়েটের ঘটনাকে ‘ভয়ানক’ উল্লেখ করে ডিকাব টক-এ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই সন্তানের জননী হিসাবে এ ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে, আমি আতঙ্কিতও।’ এদিকে ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- জার্মান সরকার নিজ দেশে এবং বিশ্বব্যাপী মুক্তভাবে মত প্রকাশের অধিকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জার্মানী কখনও এই নীতিগুলির কোনও লঙ্ঘনকে ‘শাস্তিবিহীন’ অবস্থায় রাখে না, বরং সব সময় সেই মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status