বিশ্বজমিন

গার্ডিয়ানের রিপোর্ট

ন্যায়বিচার চান আবরারের পিতা

মানবজমিন ডেস্ক

১০ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

কাম্প্যাসগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার অব্যাহত প্রতিবাদের মধ্যে বুয়েটের নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের পিতা তার সন্তান হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য আবরার ফাহাদকে (২২) টার্গেট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফাহাদকে তার হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার ন্যায়বিচার চান তার পিতা। বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণ এ খবর দিয়ে বলছে,  ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা তার ওপর হামলা চালিয়েছে। এখন সন্তান হারিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদছেন তার পিতা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেছেন, আবরার পিএইচডি অর্জন করার আশা করেছিল। চেয়েছিল দেশের সেবা করতে। তাকে হত্যার মতো এমন ঘটনা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের জানা উচিত হলের ভিতরে কি ঘটছে। এমন কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি এটা করতে পারে তাহলে হয়তো এ ধরনের হত্যা বন্ধ হবে।

গার্ডিয়ান আরো লিখেছে, ফাহাদের হত্যাকা- পুরো দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহিংসতা দমনে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। গার্ডিয়ান আরো লিখেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো এমন সংগঠনগুলোর নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের প্রহার এবং সমালোচনাকে স্তব্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আছে। গত বছর স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিক নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছিলেন। তাদেরকে লাঠিসোটা দিয়ে পেটানো হয়েছে। চাপাতি দিয়ে তাদের ওপরা হামলা চালানো হয়েছে। এর জন্য আওয়ামী লীগ ও এর যুব সংগঠনকে দায়ী করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, কিন্তু যারা ওই সহিংসতা ঘটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো তারা আটক করেছে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের।

গার্ডিয়ান আরো লিখেছে, আবরার ফাহাদ যে বুয়েটে পড়তেন সেখানকার প্রথম বর্ষের একজন ছাত্র বলেছেন, আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করেন না। তার ভাষায়, আমরা কখনো মুক্তভাবে কথা বলতে পারি না। ফাহাদ ছিলেন বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়ার সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। এখানে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকন্ট্রনিক নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। ফাহাদের বন্ধুরা বলেছেন, সম্প্রতি নয়া দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এর সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন ফাহাদ। এ জন্য তার ওপর ওই নৃশংসতা হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে পানিবন্টন ও ভারতের কাছে গ্যাস রপ্তানির মতো বিতর্কিত চুক্তি। গার্ডিয়ানের ভাষায়, অনেকেই যুক্তি দেখাচ্ছেন যে এ চুক্তি দেশের স্বার্থে নয়।

আবরার ফাহাদের লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রহারের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে মারাত্মক রক্তক্ষরণ থেকে নিহত হয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই প্রহারগুলো যেন এখন তার পিতামাতাকে দংশন করছে। পিতা বরকত উল্লাহ বলেন, ফাহাদ ছিল অত্যন্ত সাধারণ একটি ছেলে। তার ছিল শিশুসুলভ মানসিকতা। আমার ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চেয়েছিল। তার এই হত্যাকা-কে ভয়াবহ এক ক্রাইম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া। তারা অবিলম্বে এই হত্যার তদন্ত দাবি করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আবরার সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে শান্তিপূর্ণভাবে তার মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার চর্চা করেছিলেন। ফাহাদের পরিবারকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার বুয়েটে কয়েক শত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মৌন মিছিল করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মানহানি করা ও প্রহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু বুয়েটের নেতৃত্ব তা অবজ্ঞা করে যান। এই র‌্যাগিং সব সময়ই একটি বড় সমস্যা হয়ে আছে। আগের দিনের অনেক ঘটনা আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিশ করেছি। কিন্তু তারা কখনোই গুরুত্বর কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। তাদের সেই গাফিলতির ফলই হলো আবরারের মৃত্যু। এসব ঘটনায় জড়িতরা কখনো ভাবেনি তাদেরকে করুণ পরিণতির মুখে পড়তে হবে। কোনো ঘটনাকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য কাউকে হত্যা করা- এটা এক লজ্জা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status