অনলাইন

‘বড় ভয় হয়’

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

বিজোড় বছর নিয়ে ভয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর। সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, বিজোড় বছর বাঙালি জাতির জন্য সব সময় একটা ঝঞ্ঝা-বিক্ষোভের। আজ জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘এসবের শেষ কোথায়?’ শিরোনামে লেখা এক কলামে তিনি তার এই শঙ্কার কথা তুলে ধরেন।
ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম লিখেছেন, ব্রিটিশ গেছে ’৪৭-এ, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ’৭১-এ, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ’৭৫-এ। কলামে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর প্রতি তার দুশ্চিন্তার কথাও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, একটা অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বড় তুফানের আগে গুমোট ভাব।
 
তিনি লিখেছেন, যখন জি কে শামীমের মায়ের নামে ১৬৫ কোটি, বাড়িতে নগদ ২ কোটি, ১০ হাজার কোটির চলতি কাজ তার মধ্যে ৫৫০ কোটি র‌্যাব সদর দপ্তরে, ৪৫০ কোটি পূর্তভবনে, ৫০০-৭০০ কোটি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে তখন বিস্মিত না হয়ে পারি না। পত্রিকায় দেখলাম, তিনি নাকি ২-৩ হাজার কোটি টাকা লোকজনকে ঘুষ দিয়েছেন। পূর্ত বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকেই দিয়েছেন ৪০০ কোটি। ৪ কোটি হলে আমরা উতরে যাই। অথচ স্বাধীনতা না এলে যারা পায়ে জুতা পরতে পারত না, তারা আজকাল হাজার কোটি ঘুষ দেয়।

রাজনীতির শত্রুতায় পড়ে কত কথা শুনেছি, এখনো শুনি। ভরসা করি একমাত্র আল্লাহকে। তিনিই এসবের বিচার করবেন। করছেন না যে তেমনও নয়। এই জগৎ সংসারে তিনি অনেক কিছুর বিচার করেন, করছেন। তবে বর্তমান এই উত্তেজনায় বড় অস্বস্তিতে পড়েছি। আওয়ামী লীগ করি না প্রায় ২০-২২ বছর। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ছাড়তে পারিনি, পারবও না। কারণ তিনিই আমার ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা।

সেদিন আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘ক্যাসিনো চালু করেছে জিয়াউর রহমান।’ জিয়াউর রহমান করেছেন তাতে মাহবুব-উল আলম হানিফের কী। জিয়াউর রহমানের খারাপ কাজ কি তাকে বয়ে বেড়াতে হবে? জনাব হানিফের বড় ভাই আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। বেশ ভালো মানুষ ছিলেন। তার ভাই হিসেবে মাহবুব-উল আলম হানিফকে অবশ্যই ভালো চোখে দেখি। কিন্তু এসব কথায় তো গুরুত্ব দিতে পারি না। মাহবুব-উল আলম হানিফ তো বিএনপি করেন না, জিয়াউর রহমানের অনুসারী নন; তাহলে তার কাজ কেন বয়ে বেড়াবেন?

ক্যাসিনো অপরাধের কাজ এটা কি পুলিশ জানে না, তারা সহযোগিতা করেনি, সহযোগিতা নেয়নি? যুবলীগ-ছাত্রলীগ কতল হলে কিছু পুলিশেরও তো কতল হওয়া উচিত। অন্তত: ঢাকার ২০-২৫টি থানার ওসির গ্রেপ্তার হওয়া উচিত। যে যাই বলুক, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এখন আর তেমন কোনো কুকাজ হয় না বা করা যায় না। ছোট হোক বড় হোক, সব কাজেই পুলিশের সহায়তা লাগে। কিছু পুলিশ রাস্তাঘাটে যে অমানুষিক কষ্ট করে তার রহমতেই হয়তো এখনো পুলিশ বিভাগ টিকে আছে। ব্যক্তিপর্যায়ে পুলিশরা হাজার কোটির মালিক হতে পারে। কিন্তু মানুষের আস্থার মূল্য তার চেয়ে বেশি। তাই তাদের সুনামের কথা মনে রাখতে হবে। পুলিশ বাহিনীর সুনাম একেবারে শেষ হয়ে গেলে তারা রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না।

যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক এক দিনেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন এটা কেন? দুর্নীতিবাজ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া-জি কে শামীমদের পক্ষ নেয়া যেমন ঠিক হয়নি, এখন ঘুরে যাওয়াও ঠিক হয়নি। সম্রাট আকবর-শাহজাহান-হুমায়ুন-বাবরের মতো ঢাকা সিটির ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট যদি এ রকম হাজার হাজার কোটি টাকার অপরাধ করতে পারেন তাহলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী লোকেরা কত করেছেন? আর এটা তো এখন ওপেন সিক্রেট। ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের পর দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কোনো মর্যাদা নেই। সিভিল প্রশাসনের কথা অতটা বলতে পারব না, কিন্তু পুলিশ প্রশাসন কোনো আওয়ামী লীগ নেতা-এমপি-মন্ত্রীর কথা শোনে না। মন্ত্রীদেরও তেমন গুরুত্ব ও সম্মান নেই। সত্যিই একটা অস্বস্তিকর অবস্থা। বড় তুফানের আগে গুমোট ভাব।

অন্যদের জন্য তেমন ভাবী না, সভানেত্রীর জন্য ভাবী। তাদের কষ্ট, দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই বড় বেশি বুকে বাজে। আমরা কোথায় যাচ্ছি আর দু-চার দিনের মধ্যে কোথায় যাব। বিজোড় বছর বাঙালি জাতির জন্য সব সময় একটা ঝঞ্ঝা-বিক্ষোভের। ব্রিটিশ গেছে ’৪৭-এ, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ’৭১-এ, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ’৭৫-এ। তাই বিজোড় বছরে আমার বড় ভয় হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status